Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দুই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য চান মন্ত্রী

উত্তরবঙ্গ এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য চান রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এই বিষয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে মন্ত্রীর প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি নামের তালিকা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই তালিকা রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য চান রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এই বিষয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে মন্ত্রীর প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি নামের তালিকা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই তালিকা রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

বুধবার নবান্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্থায়ী উপাচার্য থাকলে কাজের সুবিধা হয়। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেন। দীর্ঘ দিন অস্থায়ী উপাচার্য থাকায় কাজের অসুবিধা হচ্ছে। এই মাসের মধ্যে যাতে স্থায়ী উপাচার্য যাতে নিয়োগ করা হয় তার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’ মন্ত্রীর কথায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করেন। উন্নত মানের বীজ তৈরি থেকে শুরু করে চাষের উৎপাদন খরচ কমিয়ে কী ভাবে কত জমিতে কী কী চাষ করা যায়, তারও পরামর্শ দেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো চাষিদের চাষ করতে সুবিধা হয়। স্থায়ী উপাচার্য থাকলে সব দিক থেকেই প্রতিষ্ঠানের সুবিধা হয়।

প্রায় চার বছর ধরে স্থায়ী উপাচার্য ছাড়াই চলছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ, এতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও মালদহ, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির জন্য একটি করে নতুন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়। তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় দক্ষিণ দিনাজপুরে মাঝিয়ানে কৃষি কলেজে ২০১৪ সালে পঠন-পাঠন শুরু হয়। কিন্তু এখনও সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। চেয়ার বদলের জেরে অতিরিক্ত সময় লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের নেতৃত্ব অবশ্য তা মানতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের মে মাসে অসিত সিংহ স্থায়ী উপাচার্য হিসাবে কার্যকাল শেষ করেন। তারপর থেকেই অস্থায়ী উপাচার্যরা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত দুই দফায় ছয় মাস করে মেয়াদে ওই দায়িত্বে ছিলেন অসীম সিংহ। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসাবে কাজ চালান বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে ২৩ মে ২০১৬ পর্যন্ত দায়িত্ব সামলান দেবাশিস মজুমদার। ২৪ মে ২০১৬ দায়িত্ব নেন আশিস সিংহরায়। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিসবাবু বলেন, “মাত্র নয়দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। দৈনন্দিন কাজে সমস্যা কিছু হচ্ছে না। বিগত দিনে অস্থায়ী উপাচার্যদের আমলে বহু কাজ হয়েওছে। তবে এটা ঠিক, নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রে স্থায়ী উপাচার্য হলে সুবিধে হয়।”

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাভাবিক কাজ পরিচালনায় অস্থায়ী উপাচার্যদের সময়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী উপাচার্য থাকলে বাড়তি সুবিধে হয়।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, “দায়িত্বভার নেওয়ার পর ভাল করে কাজ বুঝে নিতেই কয়েকমাস সময় লেগে যায়। তা ছাড়া উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ রক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতেও ঘনঘন চেয়ার বদলে সময় নষ্ট হয়। তবে আশার কথা আগামী জুলাই থেকে আমরা স্থায়ী উপাচার্য পেতে পারি, এমন সম্ভাবনা আছে।”

ওয়েবকুপার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্পাদক পার্থসারথি পাত্র বলেন, “একেবারে ঘনঘন অস্থায়ী উপাচার্য বদল হয়নি। বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছয় মাস করে হলেও টানা দুই বছর দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় প্রচুর কাজ হয়েছে। এ ছাড়া কর্মী নিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন কাজ হয়েছে। বাম আমলে স্থায়ী উপাচার্যরা ছিলেন। কিন্তু কাজ কিছু হয়নি। ফলে ওটা কোনও বিষয় নয়।”

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও কোনও স্থায়ী রেজিস্ট্রার নেই। দিলীপ সরকারকে নিয়ে বিতর্কের পর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল থেকেই এই সমস্যা চলছে। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে গবেষণা থেকে কর্ম সমিতির বৈঠক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সমস্ত কাজের তদারকি তথা পরিচালনা করেন তিনি। সে কারণে স্থায়ী রেজিস্ট্রার না থাকলে অন্য পদের কাউকে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেক শিক্ষা কর্তাই।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশই জানিয়েছে, বিভিন্ন বিভাগের গবেষণা পত্র পরীক্ষার জন্য কোথায় কোনটা পাঠাতে হবে তার পুরো বিষয়টি দেখেন রেজিস্ট্রার। গোপনীয়তা বজায় রেখে ওই সমস্ত কাজ করতে হয়। তা ছাড়া, সে সব রিপোর্ট এলে মৌখিক পরীক্ষা এবং রিপোর্ট প্রস্তুত করার কাজ রেজিস্ট্রারই করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বিষয়ই গবেষণার কাজ। সেই সঙ্গে আরও বহু কাজ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওই প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র স্বরূপ। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট, কর্ম সমিতির বৈঠক পরিচালনার কাজ তাঁকেই করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আয়োজনের বিভিন্ন দিক তাঁর দফতরের তরফেই করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সরকার পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ওই কাজের গুরুদায়িত্বও থাকে রেজিস্ট্রারের উপরেই। স্থায়ী রেজিস্ট্রার না থাকলে ওই সমস্ত কাজের দেখভাল যথাযথ হওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মধ্যে পড়ে হয়। তা ছাড়া স্থায়ী রেজিস্ট্রার তাঁর অফিস কী ভাবে চালাবেন, তার নিজস্ব ভাবনা পরিকল্পনা থাকে। সাময়িক সময়ের জন্য কাউকে ওই পদে বসালে তাঁর পক্ষে সেই ভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vice chancellor agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE