Advertisement
E-Paper

মায়ের দেহ ঘরে রেখে পরীক্ষা

বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন মা। রবিবার রাত থেকে অবস্থা আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। তাই রাতভর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ভোর চারটে নাগাদ মায়ের মৃত্যুর পর সকাল ন’টা পর্যন্ত নিথর দেহ আগলে বসে ছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০২:২৩
দৃঢ়চেতা: পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে হাবিবা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

দৃঢ়চেতা: পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে হাবিবা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন মা। রবিবার রাত থেকে অবস্থা আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। তাই রাতভর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ভোর চারটে নাগাদ মায়ের মৃত্যুর পর সকাল ন’টা পর্যন্ত নিথর দেহ আগলে বসে ছিল সে। শোক সামলেই মনে মনে তৈরি হচ্ছিল পরবর্তী লড়াইয়ের জন্য।

সোমবার ছিল উচ্চমাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা। মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখেই প্রতিবেশীর মোটরবাইকে করে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়াপুর বাইশি হাই মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে রওনা হয় কালিয়াচকের মহেশপুর বাহান্ন বিঘার ছাত্রী হাবিবা খাতুন। কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেও চেয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজী হয়নি হাবিবা। সহপাঠীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দেয় সে। হাবিবার এই অদম্য মানসিকতাকে কুর্নিস জানিয়েছে শিক্ষক মহল। পরীক্ষা দিয়ে সে ফিরে আসার পরই তাঁর মায়ের মরদেহ কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

কালিয়াচকের বাহান্ন বিঘার বাসিন্দা মহম্মদ তাফাজুল শেখ। তাঁরই স্ত্রী ছিলেন নুরেসা বিবি। তাঁদের চার ছেলে, পাঁচ মেয়ে। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হাবিবা। হাবিবা বাড়ির কাছে মাজাহার উল উল্লুম হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। তাফাজুল শেখ জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। রবিবার রাতে তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁকে। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার রাত থেকে মায়ের পাশেই ছিল হাবিবা। সে বলে, ‘‘মা যে এ ভাবে চলে যাবে তা ভাবতেই পারছি না। পরীক্ষা দেওয়ার সময় মায়ের কথাই বারবার মনে পড়েছে। তবুও আমি ভেঙে পড়িনি। পরীক্ষা দিয়েছি।’’

মায়ের মৃত্যুর পরেও হাবিবা যে ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে তাতে অবাক তাঁদের প্রতিবেশীরা। গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ, দিলরুবা বিবিরা বলেন, ‘‘আমরা তো ভাবতেই পারিনি যে হাবিবা এ দিন মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যাবে।’’ দাঁড়িয়াপুর বাইসি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তাজবুল হোসেনও বলেন, ‘‘আমিও শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। মেয়েটির মানসিকতাকে কুর্নিস জানাচ্ছি।’’ উচ্চমাধ্যমিকের মালদহ জেলার আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত বলেন, ‘‘এ ঘটনা বেনজির।’’

Higher Secondary Examination Habiba Khatun
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy