Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Malnutrition

পাত শূন্য মায়ের, শিশুর পুষ্টি হবে কী ভাবে

জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, গত তেরো মাসে কত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, তা জানে না প্রশাসন।

জলপাইগুড়ির জয়ন্তীপাড়ার দুই অন্তঃসত্ত্বা মা।

জলপাইগুড়ির জয়ন্তীপাড়ার দুই অন্তঃসত্ত্বা মা। ছবি: সন্দীপ পাল।

অনির্বাণ রায়
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৬:৫৯
Share: Save:

বছর দুয়েকের মেয়েটিকে কোলে চেপে রেখেছেন সাগিরা খাতুন। ছোট্ট মেয়েটি কোল থেকে নামতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু মা ছাড়ছেন না। চারপাশে অনেক লোকজন। মায়ের জামা ছিঁড়ে গিয়েছে। মেয়েকে কোলে রাখলে সেই ছেঁড়া অংশ দেখা যায় না। তাই সর্বশক্তি দিয়ে মা মেয়েকে কোলে আটকে লজ্জা ঢাকতে চাইছেন। আর তার মধ্যে কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠছেন বছর পঁচিশের মা। তাঁর শরীরে বাড়ছে আরেকটি প্রাণ। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাগিরা। তৃতীয় সন্তান আসছে দিনমজুর পরিবারে। এই সময়ে চিকিৎসকেরা মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সাগিরার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ভাত আর শাক, কোনও কোনও দিন আলুর তরকারি। আগের দুই সন্তান গর্ভে থাকাকালীন ডালের পুষ্টি পেয়েছিলেন তিনি। এ বার আর তা নেই। সাগিরার কথায়, “আগের দু’বার চাল, ডাল আলু পেয়েছিলাম। এখন তো পাই না। সরকারি সেন্টারের দিদিরা ডাল, আলু সেদ্ধ খেতে বলেছেন। পাব কোথায়? ওদের বাবার (কোলের মেয়েটিকে দেখিয়ে) কাজও এখন বন্ধ।”

জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্র থেকে কবুল করা হয়েছে, গত তেরো মাসে কত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, তা জানে না প্রশাসন। করোনাকালে কোনও শিশুকে ওজন করাতে পারেনি তারা। জেলার সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের প্রকল্প আধিকারিক ধনপতি বর্মণ বলেন, ‘‘বরাদ্দ না থাকায় কয়েক মাস চাল, ডাল, আলু বিলি করা যায়নি। চলতি মাস থেকে বিলি শুরু হবে। গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিতে নজর দেওয়া হচ্ছে নানাভাবে। কিন্তু করোনার কারণে শিশুদের ওজন করা সম্ভব হচ্ছে না।’’

জলপাইগুড়ি শহরের জয়ন্তীপাড়ার কলোনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন সাগিরা। তাঁর আশেপাশে আরও কয়েক জন সন্তানসম্ভবা মায়েরা দাঁড়ানো। মহিলাদের সকলেই হয় দ্বিতীয় নয়তো তৃতীয় বার মা হচ্ছেন। যাঁরা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার মা হচ্ছেন, তাঁদের আরও বেশি পুষ্টির প্রয়োজন, বলছেন প্রাক্তন সরকারি চিকিৎসক তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুব্রত ভৌমিক। তিনি বলেন, “গর্ভবতী অবস্থায় সুষম খাদ্য প্রয়োজন। রোজ ডাল খাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।”

আশা দিদিকে দেখে দুপুর বেলায় জড়ো হয়েছিল এই মায়ের দল। সেই দলে ছিলেন মাম্পি দাস। তিনি বললেন, “স্বামীর কাজ বন্ধ। বাড়িতে ভাত ছাড়া কিছু হয় না। পাশে মায়ের বাড়ি থেকে কোনও দিন খাবার পাঠায়। আগে তবু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ডাল-আলু পেতাম।”

এ যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। জেলা সদরের বাসিন্দা একদল মা খাদ্যে পুষ্টি পাচ্ছেন না। তাঁদের শিশুরা কি অপুষ্টি নিয়েই জন্মাবে? জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, “এই মায়েদের শিশুরা অত্যন্ত কম ওজন নিয়ে জন্মায়। সেই সব শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শরীরে নানা রোগ চেপে বসে।”

জয়ন্তী পাড়ারই বাসিন্দা দুর্গা দাস জানালেন, তাঁর স্বামী টোটো চালান। করোনাকালে বিধিনিষেধে আয় কমে গিয়েছে। ডাল, আলু, ডিম— কিছুই বাজার থেকে নিয়মিত কিনতে পারেন না। সুজা শর্মার কথায়, “অঙ্গনওয়াড়ির খাবার পেলে ডাল আর আলু সেদ্ধ রোজ হত, এখন তো তা-ও হয় না। এ দিকে পেটের শিশুটাও দিন দিন বড় হচ্ছে।” পৃথিবীর আলো দেখার আগেই অপুষ্টির আশঙ্কা নিয়ে মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠছে এমনই কত প্রাণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE