Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
গাফিলতির নালিশ দুই হাসপাতালে

মৃত সন্তান প্রসব, ক্ষোভ মানিকচকে

ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলো মালদহের মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেও চিকিৎসকেরা কোনও চিকিৎসা করেননি। যার ফলে ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেন বলে দাবি পরিবারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলো মালদহের মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেও চিকিৎসকেরা কোনও চিকিৎসা করেননি। যার ফলে ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেন বলে দাবি পরিবারের।

সোমবার রাতে এমনই অভিযোগ তুলে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় আত্মীয় পরিজনেরা। এমনকী হাসপাতালের চিকিৎসকদের ঘরে আটকে রেখেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এ দিকে, বারবার করে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রাইভেটে রোগী দেখতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা দেন না। যার জন্য প্রায় চিকিৎসার গাফিলতিতে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আমরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দারস্থ হব। এই বিষয়ে হাসপাতাল ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। রোগীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সামান্য উত্তেজনা ছিল। পুলিশ যাওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার সকালে মানিকচক থানার এনায়েতপুরের মোহনার বাসিন্দা পিঙ্কু প্রামানিক তাঁর স্ত্রী ঝুমাকে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পিঙ্কুবাবুর গ্রামেই একটি সেলুন রয়েছে। এ দিন রাত সাড়ে আটটা নগাদ ঝুমা দেবী একটি মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর আত্মীয়েরা। তাঁরা চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালেই শুরু করে দেন বিক্ষোভ। হাসপাতালের চিকিৎসকদের এক ঘরে আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ। ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভ চলার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মাসচারেক আগে এই হাসপাতালেই সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা। এমনকী হাসপাতালে ভাঙচুরও চালানো হয়েছিল। এ ছাড়া প্রায় এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকই প্রাইভেটে রোগী দেখেন। প্রাইভেটে রোগী দেখার ফলে বহির্বিভাগেও নিয়মিত হাজির হন না তাঁরা। একই অবস্থা অন্তর্বিভাগেও। ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার স্বামী পিঙ্কুবাবু বলেন, ‘‘২৪ ঘন্টা ধরে আমার স্ত্রী হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করলেও চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করছিলেন না। আমার স্ত্রীকে দেখছিলেন কে বি ঠাকুর। তাঁকে বারবার চিকিৎসা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি সেই সময় প্রাইভেটেই রোগী দেখছিলেন। চিকিৎসার অভাবেই গর্ভেই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়। আমার ওই চিকিৎসকের শাস্তি চাই।’’ এই বিষয়ে ওই চিকিৎসকের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মন্ডল বলেন, ‘‘কোনও তরফ থেকেই আমার কাছে অভিযোগ করা হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। আর চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead child Vandalized hospital Doctors Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE