এক সময় তাকে নিয়ে হইচইয়ের সীমা ছিল না। বছর তিনেক আগেও শাসক এবং বিরোধী দলের তাঁকে নিয়ে আগ্রহ ও সহায়তার প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের অতিকায় তরুণী অসুস্থ সিদ্দিকা পারভিনের অন্তরালের জীবন সংগ্রামে এখন কিন্তু আর কেউ সামিল নেই।
বরং অবহেলা অপমানের হাত থেকেও এখন নিস্তার নেই বিরল রোগে আক্রান্ত মেয়েটির। এক সময় নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশে দলীয় কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে সিদ্দিকা চিকিৎসা করতে ট্রেনে কলকাতা থেকে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিল। তবে এখনও সুস্থ নন। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না।
রবিবার সেই যাত্রায় মালদহ স্টেশনে গৌড় এক্সপ্রেসের প্রতিবন্ধী কামরা থেকে একাংশ রেলকর্মীর হেনস্থার জেরে তাঁকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে হয় বলে অভিযোগ। পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের সমস্যায় ২৩ বছর বয়স থেকে সিদ্দিকার চেহারা দীর্ঘ হতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর খাবারের চাহিদা। রোজ প্রায় দু’কেজি চালের ভাত খাওয়ার চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয় গরিব পরিবারটিকে। সিদ্দিকা এরপর ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এখন সিদ্দিকা ত্রিশ পেরিয়েছেন। দিনমজুর বাবা আফাজুদ্দিন সিদ্দিকার চিকিৎসার জন্য দু’দফায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ করে হিমসিম খাচ্ছেন। এখন মামা মোক্তারুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাকে মাঝে মাঝে কলকাতায় চিকিৎসা করতে যেতে হয়। কলকাতার এসএসকেএমে গিয়ে একটি করে ইঞ্জেকশন নিয়ে সিদ্দিকার দেহের বৃদ্ধি ৮ ফুটের চেয়ে আর বাড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ওই ইঞ্জেকশন তাঁরা বিনা মূল্যে পান। কিন্তু বংশীহারির অজ পাড়াগাঁ শ্রীরামপুর থেকে প্রতি মাসে কলকাতায় যাতায়াতের ট্রেন ও গাড়ি ভাড়ার খরচ জোগাতে তাঁরা আর পারছেন না। তার উপর প্রয়োজন মতো খাবারও না পেয়ে পুষ্টির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে ওই তরুণী। আফাজুদ্দিনের সংসারে নিত্য অভাব। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারটিকে ডিজিটাল কার্ড করে মাসে মাথা পিছু পাঁচ কেজি করে চালের ব্যবস্থা ব্লক প্রশাসন থেকে করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতি মাসে ওই চাল ঠিক মতো মেলে না বলে পরিবারটির অভিযোগ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সিদ্দিকার জন্য কতটা কী করা যায় দেখবো।’’