Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

দার্জিলিঙে এলেই সত্যজিৎ রায় একবার অন্তত আসতেন এখানে। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র চিত্রনাট্যের বেশ কিছু কাঁটাছেড়া নাকি গ্লেনারিজের টেবিলে বসেই তিনি করেছিলেন। আর এক পরিচালক অঞ্জন দত্তেরও পছন্দের জায়গা। নরম-গরম পানীয়, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিসের সঙ্গে স্থানমাহাত্ম্যও গ্লেনারিজকে জনপ্রিয় করেছে। ম্যালের থেকে কয়েক পা এগোলেই দোতলা বাড়িটার নীচে ক্যাফেটেরিয়া, দেড়তলায় রেস্তোঁরা এবং দোতলায় পানশালা-রেস্তোঁরা।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

কলকাতায় গ্লেনারিজ?

পাহাড়ি কফি-ব্রেক

দার্জিলিঙে এলেই সত্যজিৎ রায় একবার অন্তত আসতেন এখানে। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র চিত্রনাট্যের বেশ কিছু কাঁটাছেড়া নাকি গ্লেনারিজের টেবিলে বসেই তিনি করেছিলেন। আর এক পরিচালক অঞ্জন দত্তেরও পছন্দের জায়গা। নরম-গরম পানীয়, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিসের সঙ্গে স্থানমাহাত্ম্যও গ্লেনারিজকে জনপ্রিয় করেছে। ম্যালের থেকে কয়েক পা এগোলেই দোতলা বাড়িটার নীচে ক্যাফেটেরিয়া, দেড়তলায় রেস্তোঁরা এবং দোতলায় পানশালা-রেস্তোঁরা।
ক্যাফেটেরিয়া, রেস্তোরাঁ, পানশালা তিনটিরই বিশাল কাঁচের জানালা দিয়ে ঝকঝকে পাহাড় দেখা যায়। সত্যজিৎ থেকে অঞ্জন সকলেরই পছন্দ ছিল জানালার ধারের টেবিল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাফেটেরিয়ার জানলার পাশের একটি টেবিলেই বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ রায়, ডিজি (উপকূল) রাজ কানোজিয়া, দার্জিলিঙের জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ অনান্য সরকারি আধিকারিকরা। দুপুরের দিকে ম্যালে হাঁটাহাঁটি করে কফি খেতে সপার্ষদ তিনি গ্লেনারিজে ঢুকে যান। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও কফি খাওয়ার জন্য ডেকে নেন। চিকেন প্যাটিস, ভেজ প্যাটিস, কাপ কেক, ভেজ রোল, সসেজ থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শুধু কফি-ই খেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন শুনে গ্লেনারিজের অন্যতম কর্ণধার অভয় এডওয়ার্ড চলে আসেন। দাম নিতে না চাওয়ায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ধমকও খেয়েছেন। পরে অবশ্য, কিছু ছাড় দিয়ে বিল নেন কর্তৃপক্ষ। দার্জিলিং এবং কলকাতায় গ্লেনারিজের একটি শাখা খুলতেও অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে অভয় জানান, কলকাতায় দোকান খুললে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাসও মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন। কবে থেকে কলকাতাতেও গ্লেনারিজের ‘সিজলার’ বা ‘সসেজ’ মিলবে? এ প্রশ্নে এডওয়ার্ডের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘ক্রমশ প্রকাশ্য’।

স্বর্গবাস

ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। গ্রাম বাংলার ঢেকিশাল থেকে ঢেকির প্রায় স্বর্গবাস হয়েই গিয়েছে। মালদহের চাঁচলের গ্রামগুলির মাত্র গুটিকয়েক বাড়িতে এখনও ঢেকি দেখা যায়। অথচ কয়েক বছর আগেও ঢেকিশালা ছাড়াও কারও বারান্দায় বা রান্নাঘরে শোভা পেত ঢেকি। সকাল-সন্ধ্যা কান পাতলেই শোনা যেত ঢকাঢক ঢেকির শব্দ। ঘরে খাওয়া ছাড়াও, অনেকে চাল ভাঙানোর ব্যবসাও করতেন। ঢেকিছাটা চালের ভাতের স্বাদ ছিল আলাদা, পুষ্টিও ছিল বেশি। কিন্তু এখন বাজারে কেবল মিলে-ছাটা ঝকঝকে চাল। কিন্তু পুষ্টিগুণে তা হেরে যায় ঢেকির কাছে। চাঁচলের একটি স্কুলের পুষ্টিবিদ্যার শিক্ষিকা মধুরিমা শীলশর্মা বলেন, ঢেকিছাটা চাল খেলে শরীরে ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ত। স্বাদ আর পুষ্টির জন্য কলকাতার অনেক শপিং মলে বেশি দামে বিক্রি হয় ঢেকিছাটা চাল। কিন্তু জেলা শহরগুলিতে তার চাহিদা নেই, জানালেন চাঁচলের চাল ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান। নেহাত ঢেকির মায়ায় যে ক’জন এখনও পাড় দেন ঢেকিতে, তাদের ভরসায় বেঁচে আছে ঢেকি।

ঘরের নীচে

মাটির নীচে চাপা পড়ে-থাকা ইতিহাস বের করেছেন জগদীশ গাইন। মালদহের হবিবপুর ব্লকের জগজীবনপুরের বাসিন্দা জগদীশবাবু বাড়ির কাজের জন্য উঠোন খুঁড়ছিলেন। দিনটা ছিল ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ। মাটি খুঁড়তে গিয়ে পান একটি তাম্রপত্র। পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা পরীক্ষা করেন সেটি। তারপর নানা খোঁজ চলে। শেষে জানা যায়, তাঁর বাড়ির এলাকায় বৌদ্ধদের উপাসনাস্থল বা ‘তুলসী ভিটে’ ছিল। শুরু হয় খননকার্য। উদ্ধার হয় বৌদ্ধবিহার। তাকে ঘিরে গড়ে উঠে পর্যটন কেন্দ্র। বহু পর্যটক এখানে ভিড় করেন। যিনি এই ইতিহাসের সন্ধান পেয়েছিলেন, সেই জগদীশবাবুর উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয় এই পর্যটন কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণের। সরকার থেকে তার জন্য কিছু অনুদানও পান। তাতে সংসার চলে টেনেটুনে। তবু খুশি জগদীশবাবু। বললেন, ‘‘আমার কাছে তাম্রপত্রটি উঠেছিল। আর তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। ভাবতে খুব ভাল লাগে।’’ মালদহ জেলা সংগ্রহশালার কিউরেটর সাধনচন্দ্র দেব বলেন, ‘‘প্রায় ১২০০ বছরের প্রাচীন ওই বৌদ্ধবিহারটি। উদ্ধার হওয়া তাম্রপত্র থেকে এমনটাই জানা গিয়েছে। এখানে বৌদ্ধরা ধর্মচর্চা করতেন। খনন কার্যের সময় প্রাচীন বৌদ্ধ মুর্তিও পাওয়া গিয়েছে।’’

সুরের আকাশে

বয়স তেইশ, পুরস্কার অগুন্তি। কখনও ঠুমরি দাদরায়, কখনও বা নজরুলগীতি, লোকসঙ্গীতে এসেছে মেডেল। আকাশবাণী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় পরপর চারবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেলেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেসপাড়ার বাসিন্দা দীপান্বিতা দেবনাথ। গত বছর দ্বিতীয় হয়েছিলেন। পুরস্কারে পাওয়া রুপোর পদক নিয়ে গত সপ্তাহে জলপাইগুড়ি ফিরেছেন তিনি। ২০১২ সালে সোনার মেডেল মিলেছিল লোকসঙ্গীতে। তার পরের বছরই ঠুমরি, দাদরা এবং টপ্পা বিভাগে সোনার মেডেল। নজরুলগীতিকে বেছে নিয়েছিলেন গত বছর। দ্বিতীয় হয়ে মিলেছে রুপো। গানের জন্য সরকারি স্কলারশিপও পেয়েছেন। শৈশব থেকেই আকাশবাণীর শিল্পী, দূরদর্শনেরও। বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করে বিএড পড়ছেন দীপান্বিতা।

গানের আখর

নিজের সামান্য জমি থাকলেও চাষাবাদে সে রকম আগ্রহ ছিল না কোনও দিন। মন শুধু পড়ে গানের দিকে। ছয় দশক ধরে কত যে ভাওয়াইয়া গান তিনি রচনা করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। ফালাকাটা ব্লকের আলিনগরের বাসিন্দা ধনেশ্বর রায়ের বহু গান আজ মুখে মুখে ঘোরে। তবে দেড় দশক আগে তাঁর লেখা একটি গান খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে ধনেশ্বরবাবুকে। সেই গান না গাইলে জলসা যেন অসম্পূর্ণ থাকে — একবার উত্তর বাংলা আসিয়া যান, আমার জায়গাখান, মনের কথা শুনিয়া যান রে।

মালদহ থেকে কোচবিহার, উত্তরবঙ্গের সাত জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও বিখ্যাত খাবারের কথা তুলে ধরা রয়েছে একটি গানে। উত্তরবঙ্গের পর্যটন নিয়ে এই গান ‘থিম মিউজিক’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন। ২০১৪ সালে তাঁকে ‘বঙ্গরত্ন’ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত ২৫ বৈশাখ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির হাত থেকে যাঁরা পুরস্কার নেন, রাজ্যের তেমন তিনজন শিল্পীর মধ্যে ছিলেন ধনেশ্বরবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE