হানাদার হাতি
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: দলছুট দাঁতাল হাতি ভোরবেলায় ঢুকে পড়ে খাস শিলিগুড়ি শহরে। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে ভাঙচুর করে বহু দোকান, বাড়ি। পালাতে গিয়ে আহত হন অনেকে। জনতার ছোড়া ঢিল-পাটকেলে জখম হয় হাতিটিও। অনেক কষ্টে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে কাবু করা হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩: ডামডিমে চা বাগানে শাবক-সহ হাতির দল ঢুকে পড়ে। শ্রমিকরা দল বেঁধে হাতি তাড়াতে শুরু করে। হাতির দল প্রথমে রুখে দাঁড়ায়। পরে মানুষের সম্মিলিত লড়াইতে পালিয়ে জঙ্গলে ফেরে। একটি শাবক হাতি পা চালিয়ে ফিরতে পারে নি। বাগানের কাদা ডোবায় আটকে যায়। পরদিনই মারা যায় শাবকটি। ২০১৫তে একই ঘটনা ঘটে নাগরাকাটার লুকসান চা বাগানেও। সে বারে কুয়োর গর্তে পড়ে যায় শাবক।
২অক্টোবর ২০১৫ ডুয়ার্সের বন লাগোয়া লোকালয়ে গভীর রাতে হাতিকে চাষের খেত থেকে দূরে রাখতে বাঁশের তৈরি নজরমিনারে উঠেছিলেম ছয় যুবক। বেশ কিছুদিন ধরেই মাচা থেকে পটকা, ঢিল ছুড়ে হাতিকে তাড়াতে সফল হচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেদিন হাতির বদলা নেবার পালা। পেছন থেকে ধীর গতিতে এসে একধাক্কায় গুঁতো দিয়ে পুরো মিনার সমেত সবাইকে ভূপতিত করে দাঁতাল। হাতিটি শূঁড় তুলে আওয়াজ করে ধীরেসুস্থে চলে য়ায়। জখম হলেও কোনও প্রাণহানি হয়নি।
অন্য হাতির গল্প
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। শামুকতলার ত্রিপুরা বস্তিতে গভীর রাতে এক দাঁতাল হানা দেয়। এক কৃষকের ঘরের বেড়া ভাঙতে শুরু করতেই তিন বছরের কন্যাসন্তানকে বিছানায় রেখে বাড়ির সকলে পালিয়ে যান। ঘরে ঢুকে ওই ঘুমন্ত শিশুটিকে শুঁড় দিয়ে তুলে দু’পায়ের ফাঁকে রেখে প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে ঘরে মজুত করা ধান খেয়ে আবার শিশুটিকে বিছানায় শুইয়ে রেখে জঙ্গলে ফিরে যায় সেই দাঁতাল।
২৩ অক্টোবর, ২০১৫: বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের গজলডোবা বিট লাগোয়া একটি মাঠে হাতির দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়। ফসল বাঁচাতে মাঠের চারপাশে বিদ্যুতের তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। সেই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে হাতিটির। এমন ঘটনা ডুয়ার্সে আরও বহুবার ঘটেছে।
চিতাবাঘে-মানুষে
২০১০ থেকে এখনও অবধি ডুয়ার্স এলাকার লোকালয়ে চলে এসে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৬টি চিতাবাঘের। বেশ কয়েকটিকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারা হয়েছে। আবার অনেককে বিষ মেশানো মাংস খাইয়েও মারা হয়েছে। চিতাবাঘের হানায় আক্রান্তও হন অনেকে।
ডিসেম্বর ২০১৩: কালচিনি ব্লকের ভাটপাড়া চা বাগানের ২০ নম্বর সেকশনে চিতাবাঘ পিটিয়ে মারার পর দেহটির পেছন দিকের বাঁ পা থেকে পেট পর্যন্ত বেশ খানিকটা অংশ কেটে নেয় জনতা।
৫ জানুয়ারি ২০১৪: গরুমারার জঙ্গল লাগোয়া ধুপঝোরার জয়ন্তী গ্রামে ঢুকে পড়েছিল পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। বনকর্মীরা এসে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে চিতাবাঘকে নিস্তেজ করে তোলার পর উত্তেজিত জনতা বনকর্মীদের হটিয়ে ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই চিতাবাঘটি মারা যায়। একই ভাবে এই বছরেই মেটেলির বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতে বনকর্মীদের সামনেই খুঁচিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আরেকটি চিতাবাঘকে।
২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বন্ধুনগরে বনকর্মীদের সামনেই বাঁশ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘকে। তারপর সেটিকে তিস্তা নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
বন্য বাইসন
গত এক দশকে উত্তরবঙ্গের নানা বন লাগোয়া এলাকায় লোকালয়ে ঢুকে ছোটাছুটি করে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৫টিরও বেশি বাইসনের।
২৪ এপ্রিল ২০১৪: কোচবিহারের গোপালপুরে বাইসনের হানা। জখম ২ জন। বনকর্মীরা ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়ে সেটিকে কাবু করেন। পরে বাইসনটির অবশ্য মৃত্যু হয়।
১৭ নভেম্বর ২০১৪: ঘোকসাডাঙায় বাইসনের তাণ্ডব। এক দম্পতি বাইসনের হামলায় মারা যান।
বাঁদরামোর কাহিনি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫: গরুমারা লাগোয়া লাটাগুড়ির চাষের খেতে বাঁদরদের হানা বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীরা বানর ধরতে বনকর্মীদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। খাবারের লোভ দেখিয়ে খাঁচা পেতেছিল বন দফতর। খাঁচায় বেশ কিছু বাঁদর আটক হয়। কিন্তু বাঁদর সমেত খাঁচা তুলতে গিয়ে বনকর্মী ও সাধারণ বাসিন্দারা যেই এগিয়েছেন, তখনই বাইরে থেকে শতাধিক বাঁদর হামলা চালিয়ে দেয়। চিল-চিৎকার জুড়ে দেয় ওরা। হামলার মুখে পড়ে পিছু হটতে হয় বনকর্মীদের।
হানা কেন
কোচবিহার জেলা ও ডুয়ার্সে বিরাট অংশ জঙ্গলের লাগোয়া। সহজেই নদী পেরিয়ে বন্যপ্রাণীরা ঢুকছে। চিলাপাতা থেকে তোর্সা পেরিয়ে কালজানির দূরত্ব ৩০ কিমি মতো। সে পথে চিতাবাঘ ঢোকে।
বনাঞ্চল কমছে। জনবসতি বাড়ছে। বাসস্থান ও খাবার দুই ব্যাপারেই বন্যপ্রাণীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জঙ্গল ঘিরে পর্যটন ব্যবসা বাড়ছে। কিন্তু তাল মিলিয়ে বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায়নি। ফলে বেড়াতে গিয়ে বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত করার যেন প্রতিযোগিতা চলছে।
বিধি না মেনে চালা গাড়ির ধাক্কায় লাটাগুড়ি এবং চাপরামারির চিরে যাওয়া রাস্তায় গত পাঁচ বছরে অন্তত ত্রিশটি বাইসন-সহ অসংখ্য বন বেড়াল, শেয়াল, বেজি, গন্ধগোকুলের মৃত্যু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy