Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বাঙিটোলা

ত্রাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ পুড়ে যাওয়া গ্রাম

আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য খোলা হয়েছিল ত্রাণ শিবির। তবে ত্রাণ শিবিরে না গিয়ে যেখানে ঘর পুড়েছে তার লাগোয়া আম বাগানে ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে রাত কাটালেন মালদহের কালিয়াচক ২ ব্লকের বাঙিটোলার দেড় শতাধিক পরিবার।’’

ধ্বংসস্তূপেই নতুন করে শুরু। নিজস্ব চিত্র।

ধ্বংসস্তূপেই নতুন করে শুরু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য খোলা হয়েছিল ত্রাণ শিবির। তবে ত্রাণ শিবিরে না গিয়ে যেখানে ঘর পুড়েছে তার লাগোয়া আম বাগানে ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে রাত কাটালেন মালদহের কালিয়াচক ২ ব্লকের বাঙিটোলার দেড় শতাধিক পরিবার।

বাসিন্দদের কথায়, ‘‘ভাঙনে আমরা একাধিকবার ঘর ছাড়া হয়েছি। ঘরের ব্যবস্থা করেনি সরকার। রাজ্য সড়কের ধারে খাস জমিতেই ঝুপড়ি বানিয়ে থাকতে হচ্ছে আমাদেরকে।’’তাই নিজেদের বসত জমি ছেড়ে যেতে নারাজ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সন্ধ্যা মন্ডল, চারু মন্ডলরা। একই সঙ্গে ত্রাণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এই বিষয়ে মালদহের অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মন্ডল বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে বাঙিটোলা হাই স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। বাসিন্দারা যেতে রাজি না হওয়ায় পরে তাঁদের ত্রিপল দেওয়া হয়। আমরা তাঁদের সব রকম সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’’

১৯৯৮ সালে ভাঙনে ঘর ছাড়া হয়েছিলেন কালিয়াচক ২ ব্লকের কেবি ঝাউবনা গ্রামপঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঙিটোলা গ্রামপঞ্চায়েতের পঞ্চানন্দপুর-মোথাবাড়ি রাজ্য সড়কের ধারে পাঁচকুড়ি টোলা, খাস মহল, মতিটোলা এবং গৌড়পুর গ্রামে। রাজ্য সড়কের দু’ধারে অস্থায়ী বাঁশ, খড় দিয়ে বেড়া তৈরি করে টিন এবং টালির ছাউনি দেওয়া ঘরে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। প্রত্যেকেই দিন মজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালান। সোমবার দুপুর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফের ঘর ছাড়া হতে হয় ওই এলাকার দেড়শোটি পরিবারকে।

স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ির রান্না ঘর থেকে আগুন লাগে। আর তা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় ২০০টি বাড়ি। দমকলের চারটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভালেও পড়নের পোশাক ছাড়া কিছুই বাঁচাতে পারেনি বাসিন্দারা। আর সেই সময় গ্রামে পুরুষের সংখ্যা কম থাকায় প্রাণ বাঁচিয়ে কোন রকমে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে আসেন মহিলারা।

আশা প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমার স্বামী কাজে চলে গিয়েছিলেন সকালে। বাড়িতে চার মাসের সন্তানকে নিয়ে রান্না করছিলাম। আগুন দেখে কোন রকমে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে আসতে পেরেছি। বাড়িতে থাকা সমস্ত কিছু পুড়ে গিয়েছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল ভস্মীভূত ঘরগুলি থেকে যদি কিছু বেঁচে যায় তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ মিলছে না। রাতে রান্না করা খাওয়ার দেওয়া হয়েছে। আর কিছু পরিমানে শুকনো খাওয়ার দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে দু’বার রান্না খাবার এবং আর্থিক সাহায্যের দাবি তুলেছে পরিবারগুলি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির নামের তালিকা সংগ্রহ করার কাজ চলছে। শুকনো খাওয়ারের পাশাপাশি ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এছাড়া রান্না করা খাওয়ারও বিলি করা হবে। পুনর্বাসনের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষবাবু বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সবরকম সুযোগ সুবিধে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burnt village Malda relief Not enough
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE