Advertisement
২২ মে ২০২৪

পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ রুখতে নোটিস

সপ্তাহ দুয়েক আগের ঘটনা। দুপুর বেলা। দফতরে বসে জরিমানার চালানের রেকর্ড দেখছিলেন এক ট্রাফিক গার্ডের ওসি। মোবাইলে ফোন এল শাসক দলের এক যুব নেতার। তাঁর বন্ধুকে সেবক মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ধরেছে।

ট্রাফিক গার্ডগুলিতে ঝোলানো হচ্ছে এমন নোটিসই। — বিশ্বরূপ বসাক

ট্রাফিক গার্ডগুলিতে ঝোলানো হচ্ছে এমন নোটিসই। — বিশ্বরূপ বসাক

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েক আগের ঘটনা। দুপুর বেলা। দফতরে বসে জরিমানার চালানের রেকর্ড দেখছিলেন এক ট্রাফিক গার্ডের ওসি। মোবাইলে ফোন এল শাসক দলের এক যুব নেতার। তাঁর বন্ধুকে সেবক মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ধরেছে। গাড়ির নথিপত্র ঠিকঠাক নেই জানিয়েও বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। শাসক দলের নেতার অনুরোধ। অগত্যা ছাড়া হয় বন্ধুকে।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা, দুপুর থেকে মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে বাইকের চেকিং চলছে। সারি সারি বাইক নিয়ে দাঁড়ানো চালকেরা। হঠাৎ প্রধাননগরের দিক থেকে গাড়ি নিয়ে হাজির এক ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা। তাঁর শোরুমের এক কর্মী তখন অফিসারদের নথিপত্র দেখাচ্ছে। দেখা গেল, দূষণের সার্টিফিকেট ঠিক নেই। আবার অনুরোধ, আবেদন। পুলিশের নানা অনুষ্ঠানে সহযোগিতার কথা মাথায় রেখে ছাড়া হল চালককে।

শুধু নেতা বা ব্যবসায়ী নয়, অভিযোগ খোদ উপরওয়ালা অফিসারদের টেলিফোনেও রোজ এমন আবেদন রক্ষা করতে হয় ট্রাফিক অফিসারদের। বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রাখার সুবাদে ওসি, আইসি থেকে এসিপি বা ডিসি’রাও অনেকই সময়ই পরিচিতদের গাড়ি ছাড়ার অনুরোধ বা নির্দেশ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরাই। যেমন, মাস খানেক আগেই এক এসিপি স্থানীয় এক থানার ওসিকে টেলিফোন করে নির্দিষ্ট গাড়ির নম্বর দিয়ে তা ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্দেশ মানাও হয়।

এবার তাই ট্রাফিক গার্ডগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত ‘পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না’ শীর্ষক একটি খবরের কাটিং ঝোলানো শুরু করল ট্রাফিক পুলিশ। মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ের ট্রাফিক গার্ডে কাউন্টারে তা ল্যামিনেট করে ঝোলানো হয়েছে। যা দেখার পর পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেছেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ ঠিকই করেছে। পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। এই সরকারি নির্দেশ তো মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেও দিয়েছেন।’’

কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, শুধু ট্রাফিক পুলিশের দফতর কেন? প্রতিটি থানা-ফাঁড়িতে এমন নির্দেশ ঝোলানো জরুরি। রোজকার রাস্তায় চলার পথে গাড়ি ধরলে ছাড়ানোর জন্য আবেদন হয় ঠিকই। কিন্তু থানা-ফাঁড়িতেও প্রতিদিন আবেদন কম আসে না। শাসক দলের তরফে তো বটেই, ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, বিভিন্ন দফতর থেকে নানা আবেদন করা হয়। কাজ না হলে অনেকে আবার উপর মহলে গিয়ে তা করানোর চেষ্টাও করেন। শাসক দলের নেতার বন্ধুর সঙ্গে আইনজীবীর গোলমাল হোক বা জমির দখল নিয়ে আদালতের নির্দেশে পুলিশে সাহায্য করার জন্য ধরাধরি হামেশাই আসে। তেমনিই, মামলা লঘু করা দেওয়া বা অভিযুক্তকে আপাতত গ্রেফতার না করার অনুরোধ রোজই অফিসারদের শুনতে হয়। বাম-ডান কাউন্সিলরেরাও অনেকে টেলিফোন করে, বিভিন্ন অনুরোধ করে বসেন। বড় মামলা হলে সে সবের প্রশ্নই থাকে না। কিন্তু লঘু ধারা হলে নেতা থেকে পুলিশ অফিসার-কর্মীদের একাংশও আসরে নেমে পড়েন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Police new notice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE