দিশাহারা: স্বামী মারা গিয়েছেন। দুই সন্তান নিয়ে সংসার কী করে চালাবেন জানেন না ময়ন্তী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
আধার কার্ড তাঁর কাছে ছিল না। ভোটার কার্ড হারিয়ে ফেলেছিলেন। ভয় হচ্ছিল, যদি এ রাজ্যেও নাগরিক পঞ্জি হয়, তা হলে তিনি নাগরিকত্বের নথি দেখাতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তাঁকে সপরিবার দেশছাড়া হয়ে যেতে হতে পারে, এই আশঙ্কা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল শ্যামল রায়কে। সেই উদ্বিগ্ন আবহাওয়ার মধ্যেই ভ্যানচালক শ্যামলবাবুর দেহ পাওয়া যায়। তাঁর স্ত্রী ময়ন্তীদেবীর কথায়, ‘‘এনআরসি হলে আমাদের কী হবে, সেই আশঙ্কাতেই ও চলে গেল। কিন্তু আমরা এ বার কোথায় যাব?’’
শরৎ এসেছে। চারিপাশে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। রায় পরিবার যেন তার বাইরে। উঠোনে কখনও বসে রয়েছেন, কখনও শুয়ে পড়ছেন ময়ন্তি। ভাড়া বাড়িতে থাকেন। বললেন, “বাড়ির মালিক আমাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছে। এখন দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? কী করব? সন্তানদের লেখা পড়া বন্ধও হয়ে গেল।’’ মঙ্গলবার শ্যামলবাবুর দেহ পাওয়া যায়। তার পরে বাড়িতে মন্ত্রী এসেছিলেন। পরপর সরকারি দল এসেছিল। এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাপতি উত্তরা বর্মণ ঘুরে গিয়েছেন। সকলেই নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নথিপত্র কাগজ তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বর্মণ পাড়ারই কেউ কেউ বলছেন, অসমে তো অনেকে সব কাগজ জমা দিয়েও পঞ্জিছুট হয়ে গিয়েছেন। একানেও এনআরসি হলে তেমন হবে না, কে বলতে পারে! আর তখন ময়ন্তী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
এনআরসির ভয় যে কত গভীরে পৌঁছেছে তা এই পরিবারটিকে দেখে বোঝা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক, গ্রামের মানুষের কাছে সে খবর তত পৌঁছচ্ছে না। সেখানে পৌঁছচ্ছে অসমের উদাহরণ। আর তাতেই ভয় বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।
এই কথাগুলিই ঘুরেফিরে বলছেন শ্যামলের পরিবারের সদস্যরা। শ্যামলবাহুর বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে, ছেলে সুদেব তৃতীয় শ্রেণিতে। মেয়ের নাম চম্পা। তার দাবি, শ্যামলবাবুর ভোটার কার্ড ছিল। গত লোকসভা ভোটের আগে তৈরি হয়েছিল। সে বলে, ‘‘আধার কার্ড না থাকায় বাবা আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে। আধার কার্ড তৈরির জন্য নানা জায়গায় ছোটছুটি শুরু করে। সে সময়ই একদিন ভোটার কার্ড হারিয়ে ফেলেন বাবা।’’ চম্পা বলে, “আমার বাবা কেবল সই করতে পারতেন। তাঁর ভয় হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাবার ভয় কাটাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। তাই বাবা শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy