গত কয়েক বছরে হাতির সংখ্যাবৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার হাতির জন্য দু’টি পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। জানালেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। শনিবার শিলিগুড়িতে উত্তরের বনকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রী।
পুনর্বাসন কেন্দ্র দু’টির মধ্যে একটি আলিপুরদুয়ারের বক্সা জাতীয় উদ্যানে এবং অন্যটি পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার সীমান্তে অবস্থিত ময়ুরঝর্ণা বনাঞ্চলে স্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুনর্বাসন কেন্দ্র হলে যাদের পাঠানো দরকার, সেই সমস্ত হাতিদের চিহ্নিত করে তাদের ফের জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে পারব।’’
এ ছাড়া হাতির স্বাভাবিক গতিবিধি যাতে বাধা না পায় সে জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। নেপালের সীমান্তে হাতির করিডোরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের কাছে আলোচনার আবেদন জানানো হয়েছে বলে বিনয়বাবু জানিয়েছেন। এই পুনর্বাসন কেন্দ্র করতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি এসে গেলেই কাজ শুরু হবে। বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়েছে।
বক্সায় প্রায় ছশো টি হাতি রয়েছে বর্তমানে। এগুলি এতদিন অবাধে অসম, নেপাল, বাংলা, ভুটানে ঘুরে বেড়াত। নেপালের অংশে ১৮ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ায় হাতিদের গতিপথ বাধা পাচ্ছে। ফলে একই সময়ে এক জায়গায় হাতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে তারা। এতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ময়ুরঝর্ণা হাতি প্রকল্পেও এমন একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি হলে তাতে দলছুট হাতিদের যেমন রেখে তাকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, তেমনই আহত ও জখম হাতিদের চিকিৎসাও করা হবে। পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে। এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মুখ্য বনপাল প্রদীপ শুক্ল, উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল পিটি ভুটিয়া, উত্তরবঙ্গের বনপাল(বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক।
মন্ত্রী জানান, বক্সায় ব্যাঘ্র প্রকল্পে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বন দফতর আলাদা পরিকল্পনা নেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছে। চলতি বছরে গণনায় তিনটি রয়্যাল বেঙ্গলের অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিলেন বাঘ গণনাকারীরা। আগামী পাঁচ বছরে সংখ্যাটা অন্তত ১৫ থেকে ২০ টা করা যায় কী ভাবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। দ্রুত কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাঘের স্বাভাবিক বাসস্থান ফিরিয়ে দিতে লম্বা ঘাস লাগানোর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রেও ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট খোলা হচ্ছে। তাতে পাচারকারী ও বিশেষ করে বন্যপ্রাণী হত্যাকারীদের রুখতে কড়া নির্দেশ রয়েছে। কাউকে রেয়াত না করারও নির্দেশ রয়েছে বলে তিনি জানান।
চলতি বছরেও বনমহোৎসবের অংশ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে বনসৃজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ২০ জুলাই শান্তিনিকেতনে বনমহোৎসব শুরু হবে। তবে এবারের মূল উৎসব শিলিগুড়ি লাগোয়া কোনও জায়গায় হবে বলে এ দিন ঘোষণা করেছেন বনমন্ত্রী। তবে নতুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সেগুন গাছের পরিবর্তে বেশি করে ফলের গাছ ও ঘাসজাতীয় গাছ লাগানোর উপরে জোর দেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে আমরা শুধু বড় প্রাণীদের দিকেই নজর দিই, কিন্তু ফলের গাছ লাগালে, বাঁদর, কাঠবিড়ালি, পাখিদেরও সমান উপকার হবে। তাই আমরা সমন্বয় সাধন করতে চাই।’’