Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমা পড়ল মনোনয়ন, চক্রান্ত দেখছে বিরোধী

এমনটাই হয়েছে বোলপুর আর দুবরাজপুরে!

সামনে তৃণমূলের বাইক-মিছিল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

সামনে তৃণমূলের বাইক-মিছিল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর ও দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:১৩
Share: Save:

দলের নামেই জমা পড়েছে মনোনয়ন। অথচ, সে খবর জানা নেই বলে দাবি করলেন বিরোধী দলের নেতারা। এমনটাই হয়েছে বোলপুর আর দুবরাজপুরে!

বোলপুর ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিরোধী দলগুলির বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকে ১৪টি ও ইলামবাজার ব্লকে আটটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই। এমনটা হয়েছে দুবরাজপুরেও। ‘‘আমরা পৌঁছতেই পারিনি। অথচ আমাদের নামে মনোনয়ন জমা পড়েছি বলে শুনেছি’’— বলছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন রায়। তা হলে কী করে হল? বিরোধীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মনোনয়নপর্ব দেখাতে এ সবই শাসকদল তৃণমূলের কারসাজি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।

গত ৯ এপ্রিলের হিসেব বলছে, বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪৮টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসন ও জেলা পরিষদের তিনটি আসনের প্রত্যেকটিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন শাসকদলের প্রার্থীরা। অন্য দিকে, ইলামবাজার ব্লকেরও গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৬টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসন ও জেলা পরিষদের দু’টি আসনে শুধু তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থীরাই মনোনয়ন জমা করেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে সোমবার আবার মনোনয়ন জমার সুযোগ পেয়েছিলেন বিরোধীরা। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের অন্তর্গত ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। দিনের শেষে দেখা গিয়েছে, ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা করেছেন।

প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, সিঙ্গি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি বিজেপি ও একটি সিপিএম, রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দু’টি বিজেপি, দু’টি সিপিএম ও একটি কংগ্রেস, সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি নির্দল, রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি বিজেপি এবং কংকালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতে দু’টি বিজেপি, দু’টি সিপিএম ও একটি কংগ্রেস প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন। বাকি চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত অর্থাৎ কসবা, বাহিরি-পাঁচশোয়া, সিয়ান-মুলুক ও সর্পলেহনা-আলবাঁধা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও আসনেই বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েনি। ইলামবাজার ব্লকেরও গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১৬টি আসনের ৮টি আসনে সোমবার মনোনয়ন জমা করেছেন বিজেপি-র প্রার্থীরা।

প্রার্থী জমার খবর শুনে প্রত্যেকটি বিরোধী দলেরই দাবি, এটি শাসকদলের চক্রান্ত। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের দলের কোনও প্রার্থীই সোমবার মনোনয়ন জমা করেননি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন বীরভূম সহ গোটা রাজ্যে সন্ত্রাসের আবহাওয়া। তখন খোদ তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের এলাকাতেই কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই, এটা প্রমাণ করার জন্যই এমন চক্রান্ত করা হয়েছে। আগামী দিনে এঁরা যখন দলীয় চিহ্ন পাবে না, তখনই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’’

একই বক্তব্য জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তপনকুমার সাহারও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল থেকে মনোনয়ন জমা হল, জানতেই পারলাম না। অদ্ভুত ব্যাপার তো।’’

জেলা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মনসা হাঁসদা মনে করেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন দেখাতেই এই পথ অবলম্বন করছে শাসকদলের লোকেরা।’’ সব শুনে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘এটাকেই বলে রাজনীতি। আজ নিজেরাই মনোনয়ন জমা দিয়ে স্বীকার করছে না। দু’দিন পর এরাই আবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি বলে আদালতে যাবে। পরে এরাই আবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বলবে তৃণমূল চাপ দিয়ে মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nominations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE