বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবাধে যাতায়াত বহিরাগতদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
দুপুর হোক বা মধ্য রাত—ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উপস্থিতিই নিয়ম উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লোহার গেটে তালা পড়লেও, ভাঙা পাঁচিল দিয়ে দিনে-রাতে অবাধ যাতায়াত চলে। সাইকেল-বাইক থেকে পণ্যবাহী ছোট গাড়িও জাতীয় সড়কে যাতায়াতের সময় কমাতে ক্যাম্পাসের পথ ব্যবহার করে চলেছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর কার্যত বহিরাগতদের যাতায়াতের অবাধ ‘করিডর’-এ পরিণত। উর্দিদারী নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও, ৯০০ একর জায়গা জোড়া এলাকায় নজরদারি জন্য রয়েছেন মাত্র ৪৫ জন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছেন যিনি, তাঁর এ বিষয়ে পেশাদারি কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নামে প্রহসন চলছে বলে অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রী-গবেষক-শিক্ষক এবং কর্মীদেরও একাংশের অভিযোগ।
নিরাপত্তায় গাফিলতির সুযোগে গত ১৫ অগস্ট দুপুরে ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে বহিরাগতরা এক গবেষক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পরে সপ্তাহ পার হতে চললেও, নিরাপত্তায় কড়াকড়ির কিছুই চোখে পড়েনি বলে দাবি পড়ুয়াদের। দ্রুত নিরাপত্তায় কড়াকড়ি না করলে বড় বিপদের আশঙ্কায় রয়েছেন পড়ুয়া-শিক্ষকদের অনেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অজস্র ফাঁকফোকরে ভরা বলে অভিযোগ। ক্যাম্পাসের আয়তন প্রায় ৯০০ একর। ক্যাম্পাসে ঢোকার জন্য রয়েছে মূল পাঁচটি গেট। বিকেলের পরে অথবা ছুটির দিনেও গেটগুলি বন্ধ রাখা হয়। তাতে বহিরাগত রোখার কোনও উপায় নেই। সীমানা পাঁচিল একাধিক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা পথ দিয়ে বাইক-পণ্যবাহী ছোটগাড়িও ঢুকে যাচ্ছে ক্যাম্পাসে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পাশে সীমানা পাঁচিলের ভাঙা অংশে তৈরি হয়েছে মন্দিরও। রাতের বেলাতেও সেই পথ দিয়ে বাইকের অবাধ প্রবেশ। ভূগোল বিভাগ লাগোয়া এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চা বাগান রয়েছে। চা বাগিচার রাস্তা বরাবর পাঁচিল ভেঙে তৈরি হয়েছে অন্তত দশ ফুট চওড়া প্রবেশ পথ। সেই পথে পণ্যবাহী টেম্পোও ক্যাম্পাসে ঢুকে যাচ্ছে। পাঁচিলের বিভিন্ন অংশে এমন দশটি পথ রয়েছে বলে অভিযোগ। এই পথ দিয়েই লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা জাতীয় সড়কে যাতায়াত করার ‘শর্টকার্ট’ পথ হিসেবে ব্যবহার করে বলে দাবি।
সেই বহিরাগতদের রোখার জন্য ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। সে কাঠামোও নড়বড়ে। নজরদারির জন্য ৭২ জন স্থায়ী কর্মীর পদ রয়েছে। কর্মী রয়েছেন মাত্র ৪৫ জন। যাদের মধ্যে ৫ জন অসুস্থ। ৪০ জন কর্মীকে তিন শিফটে কাজ করতে হয়। প্রতি শিফটে নজরদারির জন্য মেলে মাত্র ১৫ জন। পনেরো জনই অবশ্য নজরদারির কাজে বহাল নেই। প্রশাসনিক ভবনে নিরাপত্তার জন্য ৮ জনকে কাজ করতে হয়। বাকি ৭ জনের উপরে থাকে নজরদারির দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষের নিজেদের হিসেব মতো ক্যাম্পাসে ৩০টি নিরাপত্তা পোস্ট রয়েছে। কর্মীর অভাবে সেই পোস্টগুলি ফাঁকা পড়ে থাকে, যার সুযোগেই শ্লীলতাহানি, ইভটিজিঙের মতো ঘটনা রোখা যাচ্ছে না বলে দাবি।
নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিকের পদে গত ৬ বছর ধরে স্থায়ী কেউ না থাকায়। আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে রসায়ণের এক শিক্ষককে। প্রাক্তন সেনা বা পুলিশ আধিকারিকদেরই এই পদে রাখা হত। আইন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এখন অস্থায়ী হিসেবে ওই শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। যদিও, প্রশ্ন উঠেছে, অস্থায়ী ভাবেও পেশাদার কাউকেই দায়িত্ব দেওয়া যেত বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। ওই শিক্ষক অবশ্য কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেছেন। পড়ুয়াদের দাবি কর্তৃপক্ষের মনোভাব যতদিন না বদলাবে ততদিন প্রহসন চলতেই থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy