Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
হাসপাতালে ধুন্ধুমার

‘মৃত’ শিশু উঠল বেঁচে, প্রৌঢ়ের দেহ পড়ে স্ট্রেচারেই

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে রাতের মধ্যে দু-দফায় হইচই হল শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সকালে জীবিত সদ্যোজাতকে মৃত বলে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হাসপাতালের নার্সদের একাংশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে দুপুর পর্যন্ত হইচই চলে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ফের হট্টগোল বাঁধে।

স্ট্রেচারে পড়ে সেই মৃত প্রৌঢ়ের দেহ। ইনসেটে, ডায়ালিসিস করতে এসে মৃত রোগীর শোকার্ত স্ত্রী।

স্ট্রেচারে পড়ে সেই মৃত প্রৌঢ়ের দেহ। ইনসেটে, ডায়ালিসিস করতে এসে মৃত রোগীর শোকার্ত স্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে রাতের মধ্যে দু-দফায় হইচই হল শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে।

সকালে জীবিত সদ্যোজাতকে মৃত বলে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হাসপাতালের নার্সদের একাংশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে দুপুর পর্যন্ত হইচই চলে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ফের হট্টগোল বাঁধে। অভিযোগ, ৫২ বছরের এক ব্যক্তি এ দিন দুপুরে ডায়ালিসিস করতে যান হাসপাতালে। বাড়ি ফিরছে না দেখে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে এলে দেখেন জরুরি বিভাগে স্ট্রেচারে তাঁর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। রোগীকে ডায়ালিসিস না করে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন পরিবারের লোকেরা।

এই দু’টি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদিন উত্তেজনা রইল শিলিগুড়ি হাসপাতালে।

সকালে এক সদ্যোজাতকে মৃত বলে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্লাস্টিক, কাপড়ে মোড়া ছিল দেহটি। পরিজনেরা শেষ দেখা দেখতে সেই প্লাস্টিক, কাপড় খুলে তাকে বার করতেই দেখা যায়, শিশুটির শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। চমকে ওঠেন প্রসূতির আত্মীয় সরস্বতী ঠাকুর। দ্রুত শিশুটিকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। নার্সরা সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন শিশুটি বেঁচে রয়েছে। এ দিন ওই ঘটনা হাসপাতালের নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের কাজের চূড়ান্ত গাফিলতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। যাদের গাফিলতিতে এই ঘটনা, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, প্রসবের সময় চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়নি কেন? সদ্যোজাত ঠিক রয়েছে কি না, তা জানতে দায়িত্বে থাকা এমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ডাকার নিয়ম। এ ক্ষেত্রে তা করা হল না কেন?

ঘটনার সময় হাসপাতকালে ছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে প্রসব হয়েছে। ওজনও খুবই অল্প ৩৮০ গ্রাম। এত ছোট বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হলে সেটা খুবই ভাল ব্যাপার হবে। সে ভাবেই চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন।’’ হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল জানান, দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ভুল হয়েছে। যা ঘটেছে সেটা যাতে ভবিষ্যতে না হয় দেখা হচ্ছে।’’


মৃত ঘোষণা করা এই শিশুটিই নিঃশ্বাস নিচ্ছে বলে বোঝা যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে আশিঘরের বাসিন্দা প্রসূতি ডলি দাসকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন অলট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় শিশুটি ঠিক রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ দিন সকালে চিকিৎসক পরেশ নাথ প্রসূতিকে দেখে জানিয়েছিলেন, যে কোনও সময় গর্ভপাত ঘটে যেতে পারে ওই মহিলার। বেলা ১০ টা নাগাদ প্রসূতির ব্যথা উঠলে তাঁকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে প্রসূতি অপরিণত সদ্যোজাতকে প্রসব করে। নার্সরাই তা করান। কিছুক্ষণ পর বেলা ১২ টা নাগাদ অভিভাবকদের ডেকে সদ্যোজাতকে মৃত বলে তাঁদের হাতে তুলে দেন। চিকিৎসক পরেশবাবু বলেন, ‘‘পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে। সদ্যোজাত মৃত হলেও নিয়ম মেনে চার ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখেই তার পর দেহ পরিবারকে দেওয়া উচিত। তা মানা হয়নি। তা ছাড়া প্রসবের পর মেডিক্যাল অফিসার বা আমাকে ডাকা উচিত ছিল। সদ্যোজাত জীবিত না মৃত তা চিকিৎসক জানালে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত।’’

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দেহ পাওয়া যায় এক ব্যক্তির। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়ালিসিস করতে এসে মারা গিয়েছেন উত্তম চক্রবর্তী (৫২) নামে এক ব্যক্তি। বাড়ি আশ্রমপাড়ার সারদামণি রোডে। তাঁর আত্মীয় বাবলু তালুকদারের অভিযোগ, ‘‘সাড়ে পাঁচটার সময় হাসপাতালে এসে পরিবারের লোকেরা দেখি রোগী স্ট্রেচারে জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে রয়েছে। কী ভাবে এল, তা কেউ বলতে পারছিলেন না। ডায়ালিসিস হয়নি বলেই আমাদের সন্দেহ। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ হবে।’’

হাসপাতাল সুপারের দাবি, ডায়ালিসিস ইউনিটে ডে-কেয়ারে এ ধরনের রোগীরা থাকেন। ডায়ালিসিস করিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাড়ি যান। রোগীর সঙ্গে কেউ ছিলেন না। ডায়ালিসিস করার সময় তিনি মারা যান। পরে জরুরি বিভাগের কাছে স্ট্রেচারে দেহটি রাখা হয়।

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Negligence Siliguri Patient died
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE