Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পেনশনেও বাড়ছে ‘টেনশন’

কারও সংসার চলে পেনসনের টাকায়, কেউ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করেন পেনশনের টাকার। কিন্তু এ বার সেই পেনশন ঠিক সময়ে পাওয়া যাবে তো? চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। এক দিকে যেমন লম্বা লাইন দিতে হবে, অন্য দিকে তেমন টাকা কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। উদ্বেগে রয়েছেন তাঁদের বাড়ির লোকেরাও। কে কী বলছেন, কোথায় কী অবস্থা, তারই চিত্র একনজরে।কারও সংসার চলে পেনসনের টাকায়, কেউ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করেন পেনশনের টাকার। কিন্তু এ বার সেই পেনশন ঠিক সময়ে পাওয়া যাবে তো? চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। এক দিকে যেমন লম্বা লাইন দিতে হবে, অন্য দিকে তেমন টাকা কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। উদ্বেগে রয়েছেন তাঁদের বাড়ির লোকেরাও। কে কী বলছেন, কোথায় কী অবস্থা, তারই চিত্র একনজরে।

রবিবার বন্ধ ব্যাঙ্ক। টাকার আশায় এটিএমের সামনে দীর্ঘ লাইন ফালাকাটায়। — রাজকুমার মোদক

রবিবার বন্ধ ব্যাঙ্ক। টাকার আশায় এটিএমের সামনে দীর্ঘ লাইন ফালাকাটায়। — রাজকুমার মোদক

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

আড়াই বছর আগে অবসর নিয়েছি। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ায় থাকি। অবসর নেওয়ার পরেই আয় কমে প্রায় অর্ধেক। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী সহ পাঁচ জনের সংসার। পরিবারের মূল আয় পেনশনটুকু। নোট বাতিলের ঘোষণার পরে টাকা জোগাড়ের ঝক্কি টের পেয়েছিলাম। চড়া রোদে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা থেকে দু’হাজার টাকা পেয়েছিলাম। বাজার-মুদি দোকানে বলে কয়ে ধারে কিছু জিনিস নিয়ে সংসার সামাল দিচ্ছি। এত দিন পর্যন্ত জানতাম পেনশনটা পুরোই তুলতে পারব। যদিও, এ দিনই জানতে পারি পেনশনের অ্যাকাউন্ট থেকেও ইচ্ছে মতো টাকা তোলা যাবে না। ছেলের গৃহশিক্ষকের ফি সময় মতো দিতে পারিনি। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো আমাদেরও তোষকের তলায়, ঘটে কয়েকটি পাঁচশো টাকার নোট ছিল। তা-ও তো সব ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাতেও আর কিছু নেই। মিষ্টি-ফল কেনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এবার যদি পেনশনের টাকাটাও না পাই তবে খাব কী? সরকারের কাছে অনুরোধ, পেনশনের ব্যবস্থা টুকু করে দিন।

ভবেশ রায়,

প্রাক্তন শিক্ষক, শিলিগুড়ি

ব্যাঙ্কে যা লাইন তাতে সেখানে ঢোকাই যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতি এটিএমগুলিতেও। টাকা তুলতে পারছি না। সামনেই পেনশন সারা দিন দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্কে ঢুকতে পারলেও পুরো টাকাটা তুলতে পারব কি না তা নিয়েও চিন্তায়।

রসুল বক্স,

প্রাক্তন সরকারি কর্মী ইসলামপুর

অবসরপ্রাপ্তদের জন্য খুব চিন্তার বিষয়। ব্যাঙ্কগুলিকে বার বারই অনুরোধ করছি, যাতে ব্যাঙ্কে অবসর প্রাপ্তদের আলাদা কাউন্টার করে দেয়. কিন্তু ব্যাঙ্কে তো ভিড়ের জন্য অবসর প্রাপ্তরা ঢুকতেই পারছেন না।

অসিত ঘোষ মজুমদার

সদস্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী পেনসনার সমিতি

উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটি

এখন দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে পারি না। কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। টাকা না তুললে তো ওষুধের দাম পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব নয়। সঞ্চয় খুবই কম। যেটুকু রয়েছে, তাও তো এখন তুলতে পারছি না। সব থেকে ভয় পাচ্ছি, যদি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ি, কী করব?

আনারুল ইসলাম

প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, মাটিকুণ্ডা

আর কয়েক দিন বাদেই পেনশনের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। তবে সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে এক সঙ্গে তুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ব্যাঙ্ক তো চার হাজার টাকার বেশি দিচ্ছেই না। আমাদের জন্য তো কোন পৃথক লাইনেরও ব্যবস্থা করেনি ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

সুজিত সরকার

এনবিএসটিসি-র প্রাক্তন কর্মী

কোচবিহার

জেলায় পেনশন ভোগীর সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। গড়ে প্রয়োজন প্রায় ৬০ কোটি টাকা। অথচ ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ফলে নভেম্বরের পেনশন মেটাতে সমস্যা হতে পারে। এমনিতেই মাস পয়লা পেনশন হয়না। এ বার তো ব্যাঙ্কগুলিতেই সমস্যা। ফলে কবে পেনশন হবে উদ্বেগ থাকছেই। কোচবিহারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই শাখায় পেনশনভোগী আছেন ৬০০ জন। ১২ লক্ষ টাকা লাগে। সেই টাকা না এলে সমস্যা হবে।

বালুরঘাট

ট্রেজারি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় পেনশনার রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি। তাঁদের প্রতি মাসে পেনশন দিতে খরচ হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজারের কথায়, ব্যাঙ্কে টাকা নেই। মাস পয়লা হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। খাতা কলমে বেতন ও পেনশনের বরাদ্দ এলেও নগদ টাকার তো সরবরাহ নেই। আগামী সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে নগদ টাকার সরবরাহ না পেলে চরম অবস্থা আশঙ্কা করে দুশ্চিন্তায় এই শীতে ঘাম ছুটছে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ও পোস্টমাস্টারদের।

ইসলামপুর

মোট অবসর প্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারির সংখ্যা প্রায় চার হাজার. তার মধ্যেই অবসর প্রাপ্ত বিভিন্ন দফতরের কর্মচারি, স্কুল শিক্ষকও রয়েছেন। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রাক্তন সমরকর্মী থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিরাও। ইসলামপুর শহরের স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে পেনশন তোলেন যাঁরা তাঁদের সংখ্যা তাই কম নয়। ইসলামপুরের ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে পেনশন তোলেন ৭০০ জনের বেশি সরকারি কর্মচারি। জানা গিয়েছে, ইসলামপুর স্টেট ব্যাঙ্কেই রাজ্য সরকারি অবসর প্রাপ্তদের জন্যই প্রয়োজন প্রায় এক কোটি টাকা। এমনকি ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। পেনসন নিতে গিয়ে সরকারি কর্মচারিরা সম্পূর্ণ টাকা পাবেন কি না তা নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় প্রত্যেকে।

জলপাইগুড়ি

এই মুহুর্তে প্রায় ষোলো হাজার পেনশনভোগী রয়েছেন৷ যাদের পেনশন দিতে খরচ প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ কোটি টাকা৷ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে তাঁরা পেনশন তোলেন৷ ট্রেজারির এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি৷ কিন্তু কথা বলে বুঝতে পারছি, ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত টাকা না এলে পেনশনভোগীরা এ বার এক সঙ্গে পুরো পেনশনের টাকা তুলতে পারবেন না৷ স্টেট ব্যাঙ্কে জলপাইগুড়ি মেন শাখা থেকে প্রায় প্রায় তিন হাজার পেনশনভোগী পেনশনের টাকা তোলেন৷ ওই ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে কোনও সমস্যা হবে না৷ কিন্তু তা না হলেই সমস্যা৷ জলপাইগুড়ি ডাক বিভাগে সুপার নীতু বলেন, ‘‘চেষ্টা করছি পেনশনারদের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রাখার৷ জেলায় ডাক বিভাগ থেকে এক হাজারেরও বেশি পেনশনভোগী পেনশন তোলেন৷’’ পেনশনারদের বিভিন্ন সংগঠন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষদের অনুরোধ করেছেন আলাদা ব্যবস্থা করার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pensioners demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE