ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাজেহাল বাসিন্দারা। কোথাও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকছে না। কোথাও আধ ঘণ্টা অন্তর অন্তর বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। কোথাও ট্রান্সমিটার খারাপ হয়ে থাকছে দিনের পর দিন। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, গোটা রাত বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকছে কোচবিহার জেলার অধিকাংশ এলাকা।
অভিযোগ, দু’-এক দিন নয়, দিনের দিনের পর ধরে একই অবস্থা চলছে কোচবিহারে। বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের অভিযোগ জানাতে গেলে কোথাও কোনও সমস্যা নেই বলে তাঁরা দাবি করেন। তা নিয়েই ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা। কাল, মঙ্গলবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত কোচবিহারে আসবেন। তাঁর কাছেও অভিযোগ জানাবেন তাঁরা। কোচবিহারের ডিভিশনাল ম্যানেজার বিষ্ণু দত্ত দাবি করেন, “বিদ্যুতের বড় কোনও সমস্যা নেই। কোথাও বিচ্ছিন্ন ভাবে সমস্যা হতে পারে। দিন কয়েক আগে ঝড়-বৃষ্টিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন সব ঠিক আছে।”
কোচবিহার থেকে মাথাভাঙা, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জের সাধারণ বাসিন্দাদেরা অবশ্য দাবি, কোচবিহারে বিদ্যুৎ পরিষেবা তলানিতে নেমেছে। শাসক দলের নেতারা পর্যন্ত বিদ্যুতের ওই দশায় ক্ষুব্ধ। মাথাভাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তালেব আজাদ বলেন, “মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ তো চলে যাচ্ছেই। যেটুকু সময় থাকছে, তখন ভোল্টেজ থাকছে না। এমন অবস্থায় খুব সমস্যায় পড়েছি। অফিসের কাজকর্মেও সমস্যা হচ্ছে।” মাথাভাঙার তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আলিজার রহমানও বিদ্যুতের ওই দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, গ্রামের দিকে বিদ্যুৎ প্রায় থাকছেই না। তিনি বলেন, “ছোট ছোট শিল্প বিদ্যুতের উপরে নির্ভর করে থাকে। অথচ বিদ্যুতের ওই অবস্থা পরিবর্তনে কোনও উদ্যোগ নেই জেলার আধিকারিকদের।”
কোচবিহার সদর মহকুমার অধিকাংশ এলাকাতেও ওই একই অবস্থা। ঘুঘুমারি, কদমতলা, টাপুরহাট, সুটকাবাড়ি থেকে শুরু করে চান্দামারি, হাড়িভাঙা, পুটিমারি-ফুলেশবরী সর্বত্র একই অবস্থা। ঘুঘুমারির বাসিন্দা সঞ্জীব রাজভর বলেন, “আমাদের দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলে গোটা রাত বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের ওই বেহাল অবস্থার কথা আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।” কদমতলা সংলগ্ন হাওয়ারগাড়িতে একটি ট্রান্সমিটার চার দিনের বেশি সময় ধরে খারাপ হয়ে পড়ে থাকার পরেও ঠিক করা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে গোটা গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। শনিবার ক্ষুব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুতের একটি গাড়ি আটকে ক্ষোভ দেখায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের পক্ষেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, দিনহাটায় সরিষার তেল কারখানা-সহ বেশ কিছু মানুষ ক্ষুদ্র শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। জেনারেটর চালিয়ে কাজ করতে গেলে তাঁদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এই সময় অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। মঞ্চের পক্ষে জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “বলা চলে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রচুর মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’’
গ্রামের দিকে অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে বিদ্যুৎ প্রায় থাকছে না। বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন কি করছে বুঝতে পারা যাচ্ছে না।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোচবিহার শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা খানিকটা স্বাভাবিক রাখার বাইরে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের কোনও উদ্যোগ নেই। বাসিন্দাদের কয়েক জন বলেন, “গোটা জেলায় কয়েক লক্ষ পরিবার বাস করেন। সেখানে শহরে কয়েক হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে দফতরের কর্মীরা ভাবছেন সব ঠিক আছে। এটা মেনে নেব না। বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কাছে এই অবস্থার কথা তুলে ধরা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy