অব্যবস্থা: আগুনে পোড়া রোগীকে এ ভাবেই দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের দৃশ্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
বিপদ হলে তা সামলানোর ব্যবস্থা আছে কি? মঙ্গলবার বিস্ফোরণের জেরে কলকাতায় এক শিশুর মৃত্যুর পরে এই প্রশ্ন উঠছে জেলার হাসপাতালগুলিতেও।
শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হলে গুরুতর জখমদের শরীর ঝলসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার জন্য দরকার হয় আধুনিক ‘বার্ন’ ওয়ার্ড। বিপদে একসঙ্গে জখমের সংখ্যা বেশি হলে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সার্জেনদের একটি দলও থাকা দরকার। অভিযোগ, কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালে নামেই ওই পরিকাঠামো রয়েছে।
কোচবিহার হাসপাতালে খাতায় কলমে বার্ণ ওয়ার্ড রয়েছে। একসঙ্গে আটজনকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আধুনিক ব্যবস্থায় একজনকে একটি কেবিনে রাখার কথা। সেটাও হতে হবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। সবসময় সার্জেন রাখা হলেও সেই ব্যবস্থা নেই। মাঝে মধ্যেই ‘অন কলে’ আনতে হয়। তাছাড়া সার্জেনের সংখ্যাও মাত্র দু’জন। ফলে একসঙ্গে বেশি রোগীর চাপ হলে সামলানো মুশকিল হবে। জেলা হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন অবশ্য বলেন, “আধুনিক বার্ন ওয়ার্ডের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।” একই সঙ্গে উদ্বেগ রয়েছে জেলায় বম্ব স্কোয়ার্ড না থাকার অভিযোগ নিয়েও।
পুলিশের এক কর্তা জানান, আলিপুরদুয়ারের সিআইডি কর্মীদের সাহায্য নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলার দল কতটা সক্রিয়, বিপদ হলে পরিস্থিতি সামলাতে কতটা সফল হবে সে সব নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। জেলাশাসক কৌশিক সাহা অবশ্য বলেন, “দক্ষ বিপর্যয় মোকাবিলা দল জেলায় রয়েছে।”
এতকিছুর পরেও অবশ্য কোচবিহারের বাসিন্দাদের উদ্বেগ কমছে না। তাঁদের কয়েকজনের কথায়, কলকাতাতেও এক কিছু থাকার পরেও জখম শিশুর মৃত্যু হল। এখানে তো সেই তুলনায় কিছুই নেই। জেলার বাসিন্দাদের এমন উদ্বেগের কারণ কী? কেনই বা নাগেরবাজার-কাণ্ড চিন্তা বাড়াল? কোচবিহারে একাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাই তার কারণ বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। গত সেপ্টেম্বরে চান্দামারিতে বোমা বিস্ফোরণে এক ব্যাক্তি জখম হন। জুলাইয়ে দিনহাটায় বল ভেবে পড়ে থাকা জিনিস নিয়ে খেলতে গিয়ে দিনহাটায় দুই শিশু জখম হয়। বোমা উদ্ধারের ঘটনাও নতুন নয়। কোচবিহারের টাপুরহাটেও কিছুদিন আগে একাধিক বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। আলিপুরদুয়ার থেকে সিআইডি-র বোম স্কোয়ার্ড কর্মীরা এসে বোমা নিষ্ক্রিয় করেছেন।
পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারেও বড় মাপের বিস্ফোরণ কিংবা দুর্ঘটনায় ঝলসে যাওয়াদের পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তবে ‘রেফার’ করার আগে ‘লাইফ সেভিং’ চিকিৎসা হাসপাতালেই দেওয়া হয়ে থাকে বলে দাবি চিকিৎসকদের৷ বিস্ফোরণে কারও জখম সাধারণ হলে পুরো চিকিৎসাই জেলা হাসপাতালেই করা হয়ে থাকে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা৷ সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘কোনও বিস্ফোরণে কেউ সাধারণ জখম হলে তার পুরো চিকিৎসার ব্যবস্থাই জেলা হাসপাতালে রয়েছে৷ মারাত্মক জখম অবস্থায় কেউ হাসপাতালে এলে প্রাথমিকভাবে তার ‘লাইফ সেভিং’ চিকিৎসাও এই হাসপাতালেই হয়৷ তারপর যদি বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, তবেই তাকে রেফার করা হয়৷’’
পুলিশ জানিয়েছে, আলিপুরদুয়ারে সিআইডির ‘বম্ব স্কোয়াড’ও রয়েছে৷ কোথাও কোন বোমার সন্ধ্যান মিললে তাদেরই যাওয়ার কথা৷ সেইসঙ্গে জেলা পুলিশের ‘কুইক অ্যাকশন টিম’ও তৈরি থাকে৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy