বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গন। — ফাইল চিত্র
নেহাতই সমাপতন, নাকি সেই ট্র্যাডিশন চলছেই! তখন ভারতের ভাইসরয় স্যার জন লরেন্স। প্রশাসনিক কাজের সুবিধের জন্য ভাইসরয়ের নির্দেশে তৈরি হল দু’টি নতুন জেলা। বরাক উপত্যকায় হাইলাকান্দি এবং তিস্তা পাড়ে জলপাইগুড়ি। তারও ঢের আগে বৈকুণ্ঠপুরের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে জলপাইগুড়ি। ১৮৬৯ সালে প্রথম জেলার স্বীকৃতি ভাইসরয় জন লরেন্সের নির্দেশে। ইতিহাস চর্চাকারীরা দাবি করেন, জেলা পরিচালনার সময়ে প্রশাসনিক কাজকর্মের সুবিধের জন্য কিছু এলাকা ছেঁটে ফেলেছিলেন সাহেবরা। তারও প্রায় আশি বছর পরে দেশভাগের সময় জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ৫টি থানা সীমান্তের ও পারে চলে যায়। অনেকে দাবি করে, আঁতুড়ের সময় থেকেই জলপাইগুড়ি জেলার অঙ্গচ্ছেদের শুরু। দু’বছর আগের জুনে জলপাইগুড়ি জেলা ভাগ হয়ে তৈরি হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা। জলপাইগুড়ি জেলা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ৮টি থানা, ৬টি ব্লক। তার পরেও শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ তৈরির দাবি আজও পূরণ হয়নি। চায়ের জেলা জলপাইগুড়ির চা নিলাম কেন্দ্রটি ধুঁকছে, ঢিমেতালে চলছে করলা-তিস্তা ঘিরে পর্যটন প্রকল্প। আগামী সপ্তাহে জেলার অঙ্গচ্ছেদের বর্ষপূর্তির আগে জলপাইগুড়িতে জোরালো হচ্ছে শহরকে কর্পোরেশন ঘোষণার দাবি।
পুরসভা কর্পোরেশন হলে নগরায়ণ প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ মিলবে। তাতেই শহরের মজে যাওয়া অর্থনীতির ভোল বদলাতে পারে। যদিও, জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশন ঘোষণার সরকারি উদ্যোগ শুরু হলেও, কবে এই নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। জেলা ভাগের পরে আয়তন ও গুরুত্ব কমেছে সাবেকি জলপাইগুড়ি জেলার। কমেছে জেলা শহর জলপাইগুড়িতে আসা বহিরাগতের সংখ্যা। সমানুপাতে কমেছে শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও। যার অন্যতম কারণ, জেলা ভাগের সময় জলপাইগুড়ি থেকে বড়-মাঝারি ৭০টি চা-বাগান চলে যায় আলিপুরদুয়ারে। ইংরেজ আমলে জলপাইগুড়ি জেলা গঠনের সময় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে জেলা জুড়ে চা-বাগানের পত্তন করেন সাহেব বণিকরা। তার পর থেকেই চা শিল্প জেলার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। চা-বাগান মালিকদের পরিকল্পনা, অনুদানে জলপাইগুড়ি শহরের নানা পরিকাঠামোগত কাজ হয়েছে। চা শিল্পের সেই রমরমা না থাকলেও, ৭০টি চা-বাগান জেলা থেকে চলে যাওয়া মানে রাজস্ব সংগ্রহে বড় ক্ষতি। সেই ক্ষতি সামাল দিতে পারত জেলায় নতুন শিল্প-বিনিয়োগ।
কিন্তু গত এক বছরে জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও নতুন সরকারি বা বেসরকারি প্রকল্প গড়ে ওঠেনি বলেই অভিযোগ ব্যবসায়ী মহলে। উল্টে শহর লাগোয়া রানিনগর শিল্পতালুকে বেশ কিছু ছোট কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। শিল্পতালুকের অধিকাংশ সংস্থার অফিসে ঝুলছে তালা। জলপাইগুড়ি শহরে একটি বেসরকারি সংস্থা জমি কিনে ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী হয়। সংস্থা জানিয়েছিল, সেই কেন্দ্রে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের কাছ থেকে তারা সরাসরি চাল-শাকসব্জি-ফল কিনবে, আবার বিক্রিবাটাও চলবে। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে আরও বেশ কিছু অনুসারী প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সম্ভাবনা ছিল জলপাইগুড়িতে। বছর পাঁচেক আগের সেই প্রকল্প একটি রাজনৈতিক দলের মুষ্টিমেয় কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলনে থমকে যায়। শহরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য সেই সংস্থাকে সরকারি আশ্বাস দেওয়ার দাবি উঠলেও, গত এক বছরে তেমন কোনও পদক্ষেপ হয়নি।
হতাশা বাড়িয়েছে সার্কিট বেঞ্চও। দীর্ঘ টালবাহানার পরে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস হলেও, নির্মাণ থমকে রয়েছে। অস্থায়ী ভবনেও কাজ শুরু হয়নি। বেঞ্চের কাজ শুরু হলে উত্তরবঙ্গের সাত জেলার বিচারপ্রার্থীদের নিয়মিত জলপাইগুড়ি শহরে আসতে হবে। ভিড় বাড়লে বাড়বে বেচাকেনা। জেলাভাগের পরে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করতে সরকারি প্রচেষ্টা দ্রুততর হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। গত ১৪ জুন বেঞ্চ নিয়ে জটিলতা কাটাতে জলপাইগুড়িতে এসে আইনমন্ত্রীর বৈঠক করার কথা থাকলেও, তা আচমকাই স্থগিত হয়ে গিয়েছে। তাতে হতাশাই বেড়েছে।
এখন একমাত্র আশা, যদি শহরকে কর্পোরেশনে উন্নীত করা যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy