গ্রামের নাম রানিনগর। শ্রীপুর মাগুরা মোড় থেকে সাত কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম।
রতুয়া ২ ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রামে পৌঁছনোর রাস্তা বলতে বেহাল হয়ে থাকা সম্বলপুর বাঁধরোড। মালদহ জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের (আর্সেনিক বিভাগ) তথ্য অনুযায়ী, মালদহ জেলার আর্সেনিক প্রবণ সাতটি ব্লকের মধ্যে অন্যতম একটি রতুয়া ২ ব্লক। এই ব্লকেরই রানিনগর গ্রামের বাসিন্দাদের আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পরিষেবা দিতে বছর ছ’য়েক আগে রানিনগর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের মোড়ে মাল্টি সেক্টোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এমএসডিপি) প্রকল্পে একটি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল।
পাম্প হাউসে জল শোধনের যন্ত্রপাতি বসানো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সংযোগের পর গ্রামের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন যে কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আর্সেনিকমুক্ত জল তারা পাবেন। কিন্তু তারপর ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও আর্সেনিকমুক্ত এক বিন্দু জলও পড়েনি ওই প্রকল্প থেকে। এখন সেই জল প্রকল্পের সামনে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। প্রকল্পের স্মারকবোর্ড নীচে গড়াগড়ি খাচ্ছে, তাতেও ধুলোর পুরু আস্তরণ।
রতুয়া ২ ব্লকের শুধু এই রানিনগরই নয়, পার্শ্ববর্তী রানিনগর হাইমাদ্রাসা, চাতর সিএস প্রাইমারি স্কুল, রানিনগর উত্তরপাড়া সর্বত্রই ওই ধরনের আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্পগুলিই মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। জল আর মেলে না। এ সব এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত নলবাহী কোনও পানীয় জল প্রকল্পই নেই। ফলে বাসিন্দাদের ভরসা হস্তচালিত নলকূপই। আর এ সব অগভীর নলকূপের জল পান করে আর্সেনিক আতঙ্কে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা।
প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের এমএসডিপি প্রকল্পে ২০১২ সালে মালদহ জেলার ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই এমন চার থেকে পাঁচটি করে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্প পিছু খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা করে। প্রকল্পগুলি বেশিরভাগ চালুই হয়নি। যেগুলি যদিও চালু হয়েছে সেসব চালুর পর কয়েকমাস সেগুলি ঠিক চললেও তারপর বেশিরভাগ গ্রামেই সেই প্রকল্প সবই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এ দিকে কেন প্রকল্পগুলির এমন হাল তা নিয়ে রয়েছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীদের মধ্যে জোর চাপানউতোরও। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পের শর্তই ছিল যে সরকার প্রকল্প তৈরি করে দেবে কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা সেটির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিলও মেটাবেন। এ জন্য গ্রামে গ্রামে একটি করে কমিটিও তৈরি করা হয়েছিল। ফলে প্রকল্প কেন বন্ধ তা সেই কমিটিরই দেখা উচিত।’’ যদিও এমন কমিটির অস্তিত্ব নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন। যেমন, রানিনগর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ আলম, সহিদুর আলম, আমিন হোসেনরা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের এই জলপ্রকল্প কোনওদিন চালুই হল না, এক বিন্দু জলই পড়ল না। তাদের কীসের কমিটি?’’
এ দিকে রানিনগর গ্রামের কাছেই থাকা চাতর সিএস প্রাইমারি স্কুলেও এমন একটি জলপ্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক খালেদুর রহমান বলেন, ‘‘জলশোধনের মেশিনটির সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগই করা হয়নি। ফলে আর্সেনিকমুক্ত জল মেলে না। তাই, স্কুলের তিনশোর বেশি পড়ুয়াদের সাধারণ নলকূপের জলই পান করতে হচ্ছে, সেই জলেই মিড-ডে মিলের রান্না হচ্ছে। প্রশাসনকে অনেক জানানো হয়েছে। তবে কাজ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy