বাম আমলে লাল ঝাণ্ডা পুঁতে জমি দখল করেছিল সিপিএম। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের আউটিনা অঞ্চলের বিষ্ণুপুর মৌজার লস্করহাট এলাকার সেই জায়গায় গড়ে ওঠা ছোট্ট কলোনিতে পরে মৎস্য দফতরের অনুদানের টাকায় বাসিন্দাদের মাথা গোঁজার মতো অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া এক ফালি ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে ওই এলাকার নাম হয়ে যায় ‘সিপিএম পাড়া’। সেই সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে সেই পাড়া তৃণমূল আমলেও সমান উজ্জ্বল।
সে সময়ের আন্দোলনের সাক্ষী ওই কলোনির বাসিন্দা সিপিএমের জোনাল সদস্য বৃদ্ধ সুনীল বিশ্বাস বলেন, তৎকালীণ সিপিএম নেতা সুকুমার সরকার, মন্টু সরকারদের নেতৃত্বে যশুরাপাড়ার জোতদার মাকেন মন্ডলের প্রায় এক বিঘা জমিকে খাস ঘোষণা করে পূর্ব বঙ্গের ছিন্নমূল ১৪টি উদ্বাস্তু পরিবারকে থাকতে দেওয়া হয়। একটি রাজনৈতিক দলের নামে একটি পাড়ার নামকরণ নিয়ে সে সময় জেলা জুড়ে সকলের কাছে বিখ্যাত হয়ে পড়ে এলাকাটি। পরবর্তীতে পরিবারের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে এলাকাটি একটি সংসদের চেহারা নিয়েছে। ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০০। কিন্তু প্রয়াত নেতা সুকুমার, মন্টুবাবুদের সাধের ‘সিপিএম পাড়া’ নাম বদল চাইছেন অনেকেই।
কেন? এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিশ পাত্র, সচিন সরকারেরা বলেন, ‘‘দীর্ঘ কাল ধরে মুখে মুখে চালু ওই নামেই ছেলে বুড়ো থেকে সকলে এলাকাটিকে এক ডাকে চেনেন বটে। তবে নামের জন্যই হয়তো এলাকাটি উন্নয়নে পিছিয়ে আছে।’’ ওই এলাকা সহ গোটা আউটিনা পঞ্চায়েতই এখন তৃণমূলের দখলে। দীর্ঘ কাল ধরে কলোনির মাটির সরু রাস্তা ভেঙে পথ চলার অযোগ্য হয়ে রয়েছে। নিকাশি গড়ে ওঠেনি। কলোনিতে ঢোকার মুখে আজও সিমেন্ট বাঁধানো জীর্ণ একটি গোল স্মারক চোখে পড়ে। স্থানীয় হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, রেবতী বিশ্বাসরা জানান, ওই স্মারকে লেখা ছিল সিপিএম পাড়া, এখন সেটা সম্পূর্ণ মুছে গিয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ইন্দিরা আবাসের পাকা ঘর পাননি। পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ভাঙা কুঁড়েতে থাকেন তাঁরা। তাঁরা জানান, নাম পাল্টে গেলে হয়তো উন্নয়ন হবে।
আউটিনা অঞ্চলের তৃণমূল প্রধান চন্দনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোট থেকেই এলাকাটিকে ওই নামে জানি। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পঞ্চায়েতের উন্নয়নে বঞ্চনার অভিযোগও ভিত্তিহীন।’’ ওই সংসদের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য রাজু দাস বলেন, ‘‘এলাকার রাস্তা তৈরি সহ উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।’’ রাজুর বক্তব্য, ‘‘সময় বদলেছে। বাসিন্দারা চাইলে এলাকাটির সিপিএম পাড়ার বদলে অন্য নামকরণ হতেই পারে।’’