Advertisement
E-Paper

জরিমানা করে নগদে ‘রফা’ চাইছে পুলিশই

সিকিমের রংপো থেকে গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়িতে কাজে আসছিলেন প্রশান্ত প্রধান। গত সপ্তাহের কথা। শালুগাড়ার কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রশান্তবাবুর গাড়ি দাঁড় করান ৩ জন ট্রাফিক পুলিশ কর্মী।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৮

সিকিমের রংপো থেকে গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়িতে কাজে আসছিলেন প্রশান্ত প্রধান। গত সপ্তাহের কথা। শালুগাড়ার কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রশান্তবাবুর গাড়ি দাঁড় করান ৩ জন ট্রাফিক পুলিশ কর্মী। গাড়ির নথিপত্র খুঁটিয়ে দেথার পর ওই কর্মীরা দেখেন, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ঠিক নেই। ৩-৬ হাজার টাকার মধ্যে চালান কেটে ফাইন লাগবে বলে তারা জানান। প্রশান্তবাবু তা দিতে রাজি হতেই একজন এগিয়ে এসে বলেন, ফাইন জমা দিয়ে ১৪ দিন পর জলপাইগুড়ি আদালত থেকে কাগজপত্র নিয়ে নেবেন। সিকিম থেকে শিলিগুড়ি হয়ে আবার জলপাইগুড়ি, শুনেই চিন্তায় পড়েন রেস্তোরাঁর মালিক প্রশান্ত।

অভিযোগ, এরপরেই এক কোণে টেনে নিয়ে তাঁকে জানানো হল, ২ হাজার টাকা দিলেইে কাগজপত্র ঠিক করে নেওয়া যাবে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অফিসার তখন মাথাও নেড়ে দেন বলে অভিযোগ। শেষে রাজি হয়ে, কড়েকড়ে পাঁচশো টাকার চারটি নোট দিয়ে শিলিগুড়ি শহরে ঢুকে পড়েন প্রশান্ত। ফেরার সময়, ওই কর্মীরাই তাঁকে আবার রাস্তা থেকে হাসিমুখে হাতও দেখান।

এর দিন দশেক আগের ঘটনা। এনজেপি থেকে আশিঘর মোড় হয়ে পিকআপক নিয়ে রবীন্দ্রনগরের দিকে ঢুকছিলেন চালক বাবলু মোহন্ত। সিগন্যাল ভাল করে না দেখে এগোতেই বিপত্তি। এক পুলিশ কনস্টেবল এগিয়ে এসে কাগজপত্র দেখতে চান। সিগন্যাল ভাঙার জন্য ৫০০ টাকা ফাইন হবে বলে জানানো হয়। অভিযোগ, সঙ্গে বাড়ানো হয়, ডান হাতও। ১০০ টাকা দিয়েই বাবলবাবু গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে যান। শুধু আশিঘর মোড় বা শালুগাড়া নয়, জলপাইগুড়ির ৫০ কিলোমিটার দূরের আদালতে কথা বলে ট্রাফিক পুলিশের একাংশ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ। তেমনই হাসমিচক, বাগডোগরা, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়েও একইভাবে চলছে রসিদ না কেটে টাকা আদায় হয় বলে চালকদের অভিযোগ।

গাড়ি চালক এবং বাসিন্দাদের অভিযোগ, পেশাদার চালকেরা বাদ দিলেও অনেকেই ট্রাফিক আইন ঠিকঠাক জানেন না। কোনও ফাইন বা রসিদ কাটা হলে ১৪ দিনের মধ্যে তা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে কাগজ নেওয়া যেতে পারে। ১৪ দিন পার হয়ে গেলেই তা সংশ্লিষ্ট আদালতে চলে যায়। ফাইনের রসিদ কাটার সময় অফিসারকে তা চালককে জানাতে হয়। কিন্তু নথি জলপাইগুড়ি আদালতে যাবে বলে চালককে জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশের একাংশ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ। অনেক চালকই সময়, খরচ বাঁচাতে তাতে ‘রফা’ করে নিচ্ছেন। শুধু জলপাইগুড়ি আদালতের কথা বলে নয়, বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দিনভর এই রফা চলছে বলে অভিযোগ।

শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘যানজটে শহর নাকাল হচ্ছে। পুলিশ কর্মীদের বদলে বেশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের ট্রাফিক সামলাতে দেখা যায়। আর ট্রাফিক পুলিশের একাংশ যান নিয়ন্ত্রণের চেয়ে টাকা আদায়ে ব্যস্ত হয়ে থাকছেন।’’ পুরসভার জলপাইগুড়ির জেলার অংশকে শিলিগুড়ির সঙ্গে প্রশাসনিক ভাবে না যুক্ত করাতেই সমস্যা বলে জানিয়েছেন বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিক। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ভাবে মানুষ রোজ হেনস্থা হচ্ছে। দ্রুত শিলিগুড়িতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দরকার। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সেই দাবিই করছি।’’ একই ভাবে শিলিগুড়ির নাগরিক কমিটির সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘দূষণ, যানজটের চেয়ে ট্রাফিক পুলিশের নজর বেশি গাড়ি ধরাতে। দিনভর তাই দেখছি।’’

শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের মূল কন্ট্রোল রুম রয়েছে জংশন এলাকায় এ ছাড়া পানিট্যাঙ্কি, জংশন, বাগডোগরা, ভক্তিনগর, জলপাইমোড় এবং এনজেপি এলাকায় ছ’টি ট্রাফিক গার্ড রয়েছে।

এর মধ্যে ভক্তিনগর, এনজেপি এবং জলপাইমোড় ট্রাফিক গার্ডের বড় অংশ জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে। এ ছাড়াও পরিবহণ সংস্থার মাসোহারা, বেআইনি স্ট্যান্ড, নো পার্কিং, ওভারলোডিং গাড়ি ঢুকতে দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দৈনিক বা মাসিক মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে চালকদের একাংশের অভিযোগ।

বিষয়টি জানার পর ‘ওয়াটসঅ্যাপ’-এ অভিযোগ বা ছবি জমা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন অফিসারদের নম্বর থানা, ট্রাফিক গার্ডে ডিসেপ্লে করা হচ্ছে। সেগুলিতে ওয়াটসঅ্যাপ রয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের ওয়েবসাইটেও নম্বর ও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। নিবার্চনের জন্য ওয়াটসঅ্যাপ-সহ একটি নম্বর রয়েছে। সেটিকেই পরে ব্যবহার করা যায় কি দেখছি।’’

Fine Money Cash Negotiating
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy