Advertisement
১৯ মে ২০২৪

রুদ্ধ নিকাশিতেই সমস্যা

নদীর শহর জলপাইগুড়িতে জল নিকাশি কখনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথচ এখন তাই যেন বাসিন্দাদের মাথাব্যথা। যে শহরে এক সময় ছোট বড় মিলিয়ে সাতটি নদী ছিল, এখন তিনটি নদী এবং একটি খাল আছে। সেই শহরে জলনিকাশি নিয়ে সমস্যা হবে কেন?

কদমতলায় নিকাশি নালার হাল এমনই। ছবি: সন্দীপ পাল।

কদমতলায় নিকাশি নালার হাল এমনই। ছবি: সন্দীপ পাল।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০১:৫০
Share: Save:

নদীর শহর জলপাইগুড়িতে জল নিকাশি কখনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথচ এখন তাই যেন বাসিন্দাদের মাথাব্যথা।

যে শহরে এক সময় ছোট বড় মিলিয়ে সাতটি নদী ছিল, এখন তিনটি নদী এবং একটি খাল আছে। সেই শহরে জলনিকাশি নিয়ে সমস্যা হবে কেন? এই মূল প্রশ্নই এখন মূখ্য হয়ে উঠেছে জলপাইগুড়ি শহরে। তার উত্তরও আছে। নিকাশি নালা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা কখনও জলপাইগুড়িতে রূপায়িত হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নিকাশি নালা পাকা করা হয়েছে। এই শহরই সাক্ষী থেকেছে ভয়াবহ বন্যার।

রাজ্য শুধু না, দেশের মধ্যেও শহরে জল নিকাশির এমন প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বিরল। অথচ সেই শহরের বেশির ভাগ এলাকা এখন একটু বেশি বৃষ্টি হলে জলবদ্ধতায় ভুগছে। নদীর জল নয়, বৃষ্টি হলে জমা জল এবং নিকাশি নালার জল মিলে জল জমে যাচ্ছে শহরের মধ্যে। জলপাইগুড়ি শহর এখন এমন এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে যে প্রকৃতির রোষ আবারও যে কোনও সময় নেমে আসতে পারে।

জলপাইগুড়ি শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে করলা নদী। শহরের উত্তর দিক দিয়ে বয়ে এসে করলায় মিশেছে ধরধরা নদী। শহরের দক্ষিণ অংশ দিয়ে গেছে গদাধর নদী। এখন সেটি গদাধর খাল নামে পরিচিত। মিশেছে পাঙ্গা নদীতে। এছাড়া আছে করলার দুটি শাখা নদী রুকরুকা এবং চুকচুকা। রুকরুকা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে দিয়ে এসে করলায় মিশেছে। চুকচুকা শহরের বিডিও অফিস ও রাজবাড়িপাড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে করলায় পড়তো। এখন অবলুপ্তির পথে।

ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, রেনেল সাহেবের ম্যাপ অনুযায়ী জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে আরও একটি নদী ছিল। সেই নদীটি দিনবাজারের মাছবাজারের একটু উত্তর দিকে করলা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে কামারপাড়ার পিছন দিয়ে উকিলপাড়ার মধ্যে দিয়ে মাদ্রাসা প্রাঙ্গন, তিন নম্বর ঘুমটি, পোড়াপাড়া হয়ে পাঙ্গা নদীতে গিয়ে মিশেছিল। এখন এই নদীটির অস্তিত্ব নেই। এখন নিষিদ্ধপল্লির মধ্যে দিয়ে একটি নালা এসে করলায় মিশে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বললেন, “ম্যাপের মধ্যে নদীটির অস্তিত্ব থাকলেও উকিলপাড়ার মধ্যে একটি জলা জায়গায় এবং পান্ডাপাড়া এলাকার কিছুটা অংশে নদীটির অস্তিত্ব চোখে পড়ে। জলপাইগুড়ি শহর পত্তন হওয়ার আগে গোটা এলাকাটি নদী এবং বিল দিয়ে ভর্তি ছিল। প্রচুর জলাভুমি ছিল। ফলে শহর পত্তন হওয়ার পরে নিকাশির কোন সমস্যার সম্মুখীন শহরবাসীকে হতে হয়নি।”

১৯৬০ সাল পর্যন্ত এই নদীগুলিই ছিল জলপাইগুড়ির জলনিকাশির প্রধান অবলম্বন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তিস্তা নদী। জলপাইগুড়ি পুরসভা সুত্রে জানা যায় ১৮৮৫ সালে পুরসভা স্থাপিত হওয়ার সময় জলপাইগুড়ি শহরের লোক সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ হাজার ৯৬৩ জন। মোট ৬টি ওয়ার্ড ছিল। দীর্ঘ সময় পরে ১৯৬৭ সালে পুরসভার ওয়ার্ড বেড়ে হয় ১৯টি। ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ডের সংখ্যা আরও বাড়ে। এখন ওয়ার্ডের সংখ্যা ২৫টি।

জলপাইগুড়ি শহর বৃষ্টিবহুল এলাকা। সারা বছর বৃষ্টিপাতের পরিমান অন্তত ৩ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। প্রতিটি বাড়ি থেকে নির্গত জলও পুরসভার নিকাশি নালায় এসে মিশছে। ১৮৮৫ সালে পুরসভা গঠনের পর দীর্ঘদিন নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভাকে মাথা ঘামাতে হয়নি তার কারন এই নদীগুলি।

পঞ্চাশের দশকের শেষে তিস্তার ওপর প্রথম বাঁধ নির্মিত হয়। এই প্রথম শহর এবং শহরতলীর যে বাড়তি জল তিস্তায় পড়তো তা প্রথম বাধাপ্রাপ্ত হল। বাঁধ না তৈরি করে উপায়ও ছিলনা। কারণ তিস্তার জল পাহাড়পুর থেকে আরম্ভ করে সেনপাড়া পর্য্যন্ত এলাকায় ঢুকে কিছুটা অংশে প্রতি বছর বন্যার সৃষ্টি করছিল। একদিক থেকে বসতি এবং কৃষি জমি বাঁচলো। কিন্তু জলপাইগুড়ি তার প্রাকৃতিক নিকাশির একটিকে হারিয়ে ফেলল। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri drainage system river dinbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE