বছরের পর বছর পানীয় জলের পরিষেবার অভাবে সমস্যায় ভুগছেন বাসিন্দারা। স্বভাবতই এ নিয়ে ইংরেজবাজার পুরসভা কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। এ বার তাই সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এমনকী প্রচারেও পুরসভার এই ব্যর্থতাকে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এই বিষয়ে ইংরেজবাজার পুরসভার বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক বছর আগে ইংরেজবাজার পুরসভায় পানীয় জল প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। পুর কর্তৃপক্ষ তা খরচ করতে পারেননি। এ বিষয়ে আমরা একাধিক বার সরব হয়েছি। মানুষের সামনে সব তুলে ধরা হবে।’’ বামেদের মতো পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরসভার কাউন্সিলর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘ভোট এলেই শুনতে পাই পানীয় জল প্রকল্পের জন্য জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। ভোট পর্ব মিটতেই প্রকল্পের কাজ এক আর চুলও হয় না।’’ যদিও বিরোধীদের দাবিকে উড়িয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘পানীয় জল প্রকল্পের জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। কাজ শুরু হওয়া সময়ের অপেক্ষা। আর বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই মানুষের মধ্যে ভুল প্রচার করে সমর্থন পেতে চাইছে।’’
২০০৭ সালে কেন্দ্র সরকার জহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান মিশন প্রকল্পে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভা এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিল। এর জন্য ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রথম ধাপে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ফের টাকা দেওয়া হয় দুই পুরসভাকে। নদী থেকে জল তুলে সেই জল পরিস্রুত করা হবে। তার পর পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি সেই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। ওই বছরই পুরাতন মালদহ পুরসভা পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেয়। শুরুর আট বছরের মাথায় ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। পুরাতন মালদহ পুরসভা কাজ শেষ করতে পারলেও ইংরেজবাজার পুরসভা এখনও পানীয় জল প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজই শুরু করতে পারেনি বলে অভিযোগ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য জমি পেতে প্রথমে সমস্যায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। কারণ, মহানন্দা নদীর জল গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায়। ফলে জল তুলে সরবরাহ করতে সমস্যা হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের জন্য ইংরেজবাজারের নিমাই সরা এলাকায় জমি দেখা হয়েছিল। সেখানে মহনন্দা নদীর জল শুকনো মরসুমে থাকে না। জমি না মেলায় এই প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছিল। অবশেষে এই প্রকল্পের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয় ইংরেজবাজার থানার কৌতুয়ালি পঞ্চায়েতের দৈবকীপুর গ্রামে। ৯৯ লক্ষ টাকায় প্রায় সাড়ে ছ’বিঘা জমি কেনা হয়েছে। ওই এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের প্ল্যান্ট তৈরি হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ শুরু না হলেও পাইপ ফেলা রয়েছে। অভিযোগ, ভোট সামনে বলে সাধারণ মানুষকে চমকে দিতে এলাকায় পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে।
ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডেই রয়েছে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা। গরম পড়তেই নলবাহী ট্যাপগুলি দিয়ে ঠিক মতো জল পড়ে না বলে অভিযোগ। এ ছাড়া রাস্তার ধারে কলগুলিতে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। ফলে নিত্য দিনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এই জেরে শহরবাসীর ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। ইংরেজবাজার পুরসভার বাসিন্দা মৃণাল চৌধুরী, অসিত দাস বলেন, ‘‘দেখি, এ বার নেতানেত্রীরা পানীয় জল নিয়ে কী বলেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy