Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শতবর্ষের স্কুলবাড়িতে ফাটল কম্পনে, উদ্বেগ

ভূমিকম্পে বিপন্ন শতাধিক বছরের প্রাচীন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রস্তাবিত ‘হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের’ একাংশ। দেওয়াল কাত হয়েছে। চিড় দেখা দিয়েছে গোটা লালবাড়িতে। বিপজ্জনক ফাটল ধরেছে কার্নিশ ও আর্চে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা বাড়ির কয়েকটি ঘর ব্যবহার অযোগ্য বলার পরে ছাত্র শিক্ষক মহলে বিষণ্ণতার ছায়া নেমেছে। শুধু স্কুল কতৃপক্ষ নয়। পুরনো কাঠামো রক্ষা করে মেরামতের দাবিতে সরব প্রাক্তনিরা। শহরের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পরামর্শ গ্রহণের প্রস্তাব বিদ্বজ্জনদের।

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের দেওয়ালে ফাটল। ছবি: সন্দীপ পাল।

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের দেওয়ালে ফাটল। ছবি: সন্দীপ পাল।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

ভূমিকম্পে বিপন্ন শতাধিক বছরের প্রাচীন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রস্তাবিত ‘হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের’ একাংশ। দেওয়াল কাত হয়েছে। চিড় দেখা দিয়েছে গোটা লালবাড়িতে। বিপজ্জনক ফাটল ধরেছে কার্নিশ ও আর্চে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা বাড়ির কয়েকটি ঘর ব্যবহার অযোগ্য বলার পরে ছাত্র শিক্ষক মহলে বিষণ্ণতার ছায়া নেমেছে। শুধু স্কুল কতৃপক্ষ নয়। পুরনো কাঠামো রক্ষা করে মেরামতের দাবিতে সরব প্রাক্তনিরা। শহরের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পরামর্শ গ্রহণের প্রস্তাব বিদ্বজ্জনদের।

প্রধানশিক্ষক ধীরাজ ঘোষ বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা বুধবার স্কুল ঘুরে দেখে পুরনো বাড়ির কয়েকটি ঘর ব্যবহার করতে না বলেছেন। এটা শোনার পর থেকে মন ভারাক্রান্ত। এই বাড়ি উত্তরবঙ্গের শিক্ষা সংস্কৃতির ফলক। কোনভাবে এটা ভেঙে ফেলা উচিত হবে না। পুরনো কাঠামো অক্ষত রেখে সংস্কারের কাজ করার ব্যবস্থা করতে ইঞ্জিনিয়ারদের অনুরোধ করা হয়েছে।” পূর্ত দফতরের নির্মাণ বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অভীক পাত্র বলেন, “অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা স্কুল বাড়িটি দেখাছেন। আমি নিজে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখব। পুরনো পরিকাঠামো রক্ষা করে সংস্কারের কাজ করার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হবে।”

ফলকে লেখা রয়েছে জেলা স্কুল বাড়ি নির্মাণ হয় ১৯১৪ সালে। বাড়ির নক্সা তৈরি করেন তৎকালীন সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও স্মিথ। ১৮টি ঘরে বিভক্ত বাড়িতে রয়েছে উঁচু প্রশস্ত ক্লাসরুম, অফিস, হলঘর। ২০১১ সালে ওই বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে সুপারিশ করে কমিশনের উত্তরবঙ্গ শাখা। পুরনো বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আপাতভাবে বোঝার উপায় নেই ভূমিকম্পে কতটা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু করিডোর ধরে সামান্য এগিয়ে আনাচেকানাচে উঁকি দিতে মন খারাপ হচ্ছে শিক্ষকদের। কোথাও ফাটল এতটা গভীর যে ইট সহ পলেস্তারা খসে পড়েছে। হলঘরের দেওয়ালে লম্বালম্বি ফাটল স্পষ্ট। গত মঙ্গলবার দুপুরের কম্পনের পরে তিন নম্বর ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে দেওয়াল কাত হয়েছে। ছাদ বেঁকে গিয়েছে। ঝোলানো পাখা মেঝেতে দাঁড়িয়ে ধরা সম্ভব হচ্ছে। পুরনো দিনের আর্চগুলিতে লম্বালম্বি ফাটল ধরেছে।

প্রধানশিক্ষক জানান, স্কুল তৈরির পরে ১৯৩০, ১৯৩১, ১৯৩৪, ১৯৪৩, ১৯৪৮, ১৯৫০, ১৯৫৬ সালের ভূমিকম্পে বিস্তীর্ণ এলাকা বারবার কেঁপে উঠলেও মোটা ইটের গাঁথুনিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল বাড়িটি অক্ষত থেকেছে। কিন্তু ২০১১ সালের কম্পনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি পুরনো পরিকাঠামো। ওই বছর প্রথম বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। সেটা সামান্য ছিল। গত ২৫ এপ্রিল থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পরপর ভূমিকম্পে ফাটল বেড়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন কোচবিহার পঞ্চানন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের কো-অরডিনেটর তথা রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রাক্তন সদস্য আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ওই স্কুল বাড়ি ভেঙে খেলা উচিত হবে না। স্কুল কতৃপক্ষকে বলব ঐতিহ্য রক্ষার জন্য তাঁরা যেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করেন।”

একই মত গবেষক বিমলেন্দু মজুমদারের। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সদর হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “পুরনো কাঠামো রক্ষা করে স্কুল বাড়ি সংস্কারের কথা ভাবতে হবে। ওই বাড়ির সঙ্গে উত্তরবঙ্গের শিক্ষা সংস্কৃতির ইতিহাসের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। যে কোন মূল্যে সেটা রক্ষা করতে হবে।” আইনজীবী সুদীপ্ত ভৌমিক বলেন, “স্কুলের প্রতিটি ইট কথা বলে। বিরাট ইতিহাস জড়িয়ে আছে ওই বাড়ির সঙ্গে। সেটা রক্ষা করে সংস্কারের কাজ করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE