Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কবির চিঠিতে রবি-স্মরণ

পরিবারের লোকেরা জানান, বাড়ির কর্তা আশিস রায় রবীন্দ্রনাথের ওই চিঠি সযত্নে রেখেছেন।

দেশ এখন যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে আবার রবীন্দ্র চৈতন্যে আশ্রয় নেওয়া খুব জরুরি বলে মনে হচ্ছে।

দেশ এখন যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে আবার রবীন্দ্র চৈতন্যে আশ্রয় নেওয়া খুব জরুরি বলে মনে হচ্ছে।

অরিন্দম সাহা 
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০৭:২০
Share: Save:

২৫ বৈশাখ মানেই বাড়ির বিশেষ গোপন লকারের তালা খোলা হবে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠি দেখতে ভিড় করবেন অনুরাগীরা। এটাই যেন কোচবিহারের সিলভার জুবিলি রোড এলাকার রায় পরিবারের ফি বছরের সূচি। আজ বৃহস্পতিবার কবিগুরুর জন্মদিনেও ওই সূচি বদলাবে না। ইতিমধ্যে কবি অনুরাগী থেকে উৎসাহীদের অনেকেই গৃহকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বাড়িতে।

পরিবারের লোকেরা জানান, বাড়ির কর্তা আশিস রায় রবীন্দ্রনাথের ওই চিঠি সযত্নে রেখেছেন। তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা রায়কে (নারায়ণ) রবীন্দ্রনাথ একাধিক চিঠি লিখেছিলেন। সে সবের কিছু বংশানুক্রমিক ভাবে আগলে রেখেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে কৌতূহলীদের আবদার মেটাতে তাই ফি বছর লকার খুলে চিঠিগুলি বাইরে আনতে হয়। আশিসবাবু বলেন, “এ বারও কবিগুরুর জন্ম দিনে ওই সব চিঠিপত্র দেখতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন উৎসাহীরা।”

কিভাবে কবির সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল ইন্দিরাদেবীর? ইতিহাস গবেষকদের একাংশ জানিয়েছেন, আশিসবাবুর ঠাকুমা ইন্দিরা দেবী কোচবিহারের প্রথম মহিলা স্নাতক। তাঁর স্বামী পূর্ণানন্দ রায় ছিলেন মহারাজার পদস্থ কর্তাদের অন্যতম (এডিসি)। তিরিশের দশকে বাংলা শেখার জন্য কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রীদেবী, ইলাদেবী শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের অভিভাবক হিসেবে ছিলেন ইন্দিরাদেবী। ইন্দিরা ছিলেন কবির স্নেহধন্য। ইন্দিরা কোচবিহারে ফিরে আসার পর কবি তাঁকে চিঠি লেখেন। আশিসবাবুর আত্মীয় ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, “সেই ছোটবেলা থেকে দেখছি প্রতিবার ২৫ বৈশাখ উৎসাহীরা ওই বাড়িতে যান। চিঠি দেখেন। এ বছরেও তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রস্তুতি একটা থাকবেই।”

এই সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ইন্দিরাদেবীর জন্মদিন উপলক্ষে মে মাসেই কোচবিহারের ওই বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, কবিগুরুর অমূল্য দলিল কেন ঘরে তালাবন্দি করে বছরভর ফেলে না রেখে যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানেও সংরক্ষণ নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আশিসবাবু অবশ্য সাফ বলেন, “কোচবিহারের সম্পদ এলাকার বাইরে দিতে আগ্রহী নই। তবে সেখানেও দিতে গেলে আমার কিছু শর্ত রয়েছে।’’ পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সংহশালায় ওই রবীন্দ্রস্মৃতি পেতে কী করা যায় ভাবা হচ্ছে।’’

গবেষকদের একাংশের দাবি, কোচবিহারের সঙ্গে কবির যোগসূত্রের আরও উদাহরণ রয়েছে। মহারানি সুনীতিদেবীর সঙ্গে কবির পত্রালাপ ছিল। দার্জিলিংয়ে কবির সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়েছে। কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনের অতিথিদের আপ্যায়ণের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ, মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ উপস্থিত ছিলেন। কবিগুরু অবশ্য কোচবিহারে আসেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE