Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বৃষ্টির জন্য ঘোরানো হল রেলও

প্রবল বৃষ্টিতে এ বারে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সে। সেবকে তিস্তার জলস্ফীতির জেরে রেল সেতু দুর্বল হতে পারে এই আশঙ্কায় বুধবার ভোর থেকে ডুয়ার্সের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাড়ছে জল। বাড়ছে উদ্বেগও। করলার জলে রুদ্ধ জলপাইগুড়ির পরেশ মিত্র কলোনির বাসিন্দারা। ছবি: সন্দীপ পাল

বাড়ছে জল। বাড়ছে উদ্বেগও। করলার জলে রুদ্ধ জলপাইগুড়ির পরেশ মিত্র কলোনির বাসিন্দারা। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:২০
Share: Save:

প্রবল বৃষ্টিতে এ বারে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সে। সেবকে তিস্তার জলস্ফীতির জেরে রেল সেতু দুর্বল হতে পারে এই আশঙ্কায় বুধবার ভোর থেকে ডুয়ার্সের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের ডিআরএম এই নির্দেশ জারি করে দূরপাল্লার সব ট্রেনকে এনজেপি থেকে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ির পথে ঘুরিয়ে চলাচলের নির্দেশ জারি করেন। ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর জানান, সেবকে তিস্তার মূল স্রোতটি বাঁ দিক ঘেঁসে প্রবাহিত হচ্ছে, স্রোতও খুব বেশি রয়েছে। ফলে রেল সেতুর বা দিকের স্তম্ভের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় রেল সেতুর সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সে কারণেই ডুয়ার্স লাইনে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ট্রেন চলাচল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেবকের রেল সেতুর পূর্ব দিকের ৭ নম্বর স্তম্ভটিকে নিয়েই রেলকর্তারা উদ্বিগ্ন। গোড়া দুর্বল হয়ে পড়েছে সন্দেহে বড় পাথর দিয়ে স্তম্ভ মজবুত করার কাজের চেষ্টা হলেও প্রবল স্রোতে সেই পাথরও ভেসে যায়। পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির জেরে কালীঝোরা বাঁধ থেকে প্রতি দিনই প্রচুর জল ছাড়া হতে থাকায় সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বুধবার বিকালে সেবকে আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর পরিদর্শনে আসেন। রেলের বাস্তুকারেরা সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যে মতামত জানাবেন, তার ভিত্তিতেই ডুয়ার্স লাইনে ট্রেন চলাচল কখন থেকে পুনরায় শুরু হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও রেল সূত্রের খবর।

ডুয়ার্সের লাইন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাঞ্চনকন্যা, সিকিম মহানন্দা এক্সপ্রেস, কামাখ্যাপুরী, কবিগুরু, গুয়াহাটি বেঙ্গালুরু, ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস, রাঁচি ঝাঁঝার মতো দূর পাল্লার যাবতীয় ট্রেনকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচমকাই ট্রেনের রুট বদলে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন ডুয়ার্সের যাত্রীরাও। নাগরাকাটার বাসিন্দা শুভজিৎ দিগপতির যেমন আজ বৃহস্পতিবার কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে নিউ মাল জংশন থেকে শিয়ালদা অবধি টিকিট রয়েছে। এবারে তাঁকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে এনজেপিতে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে। ট্রেন চলাচল স্থগিত হওয়ায় ব্যাহত ডাকঘরের পরিষেবাও। বুধবার কোন ডাকই আসেনি মালবাজারে।

মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি ব্লকের সীমানার গ্রাম চাপাডাঙা এবং দোমহনি গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্যা পরিস্থিতির বুধবার সামান্য হলেও উন্নতি হয়েছে। ধরলা এবং তিস্তার জল অনেকটাই সরে আসায় বাবুপাড়া, সাঙ্গোপাড়া, বাসুসুবার বেশ কিছু এলাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। তবে চিন্তা কমলেও সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না বাসিন্দারা। তিস্তার পাহাড়ি এলাকাতে বুধবার দুপুরে ভারি বৃষ্টি হয়েছে, সেই জল নদীতে বয়ে নীচে নামলে ফের বানভাসি হয়ে যেতে পারে গোটা গ্রাম। চাপাডাঙার বাসিন্দা ভানু রায়ের কথায়, ‘‘তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজ থেকে গেট খুলে জল ছাড়লেই আমাদের কপাল পুড়ছে, তাই এ দিন কিছুটা ভাল থাকলেও রাতে যে কী হবে, তা বুঝছি না।’’ মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছাদ চুঁইয়ে জল ঢুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেশ কিছু ওষুধ নষ্ট হতে বসেছে। ছাদের ওপর টিনের ছাউনি থাকা সত্ত্বেও ক্রুটিপূর্ণ নির্মাণের জেরেই এই ভোগান্তি হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংস্কারও চেয়েছেন বাসিন্দারা।

মালবাজার শহরেও ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। বুধবার দুপুরে ভারী বৃষ্টিতে মালবাজারের রেলওয়ে ময়দান লাগোয়া রেলের আন্ডারপাশে জমা জল ৫ ফুট ছাড়িয়েছে। আন্ডারপাসের জল আশপাশের বাড়িতে ঢুকেছে। জল ঢুকেছে মালবাজারের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ কলোনির বেশ কিছু বাড়িতে। পুরসভার অসমাপ্ত নর্দমা দিয়ে বাসস্ট্যান্ডের চত্বরের জল ঢুকে গিয়েছে মালবাজারের পার্কের গেটে। পার্কে ঢোকার মুখে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সমস্যা পড়েছেন পার্কের কর্তৃপক্ষও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

heavy rain Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE