Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বৃষ্টির সঙ্গে লুকোচুরি খেলেই প্রতিমা দর্শন

উত্তরের সাত জেলার মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল বালুরঘাট। সেখানে মেঘ থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। আত্রেয়ীর তীরে মঙ্গলবার বিসর্জনের মেলা জমে উঠেছিল। বিগ বাজেটের অনেক পুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রা হয়েছে ঘটা করেই।

বাইরে বৃষ্টি। তাই মণ্ডপেই সেলফি। ছবি: অমিত মোহান্ত।

বাইরে বৃষ্টি। তাই মণ্ডপেই সেলফি। ছবি: অমিত মোহান্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

উত্তরের সাত জেলার মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল বালুরঘাট। সেখানে মেঘ থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। আত্রেয়ীর তীরে মঙ্গলবার বিসর্জনের মেলা জমে উঠেছিল। বিগ বাজেটের অনেক পুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রা হয়েছে ঘটা করেই।

রায়গঞ্জ শহরেও বৃষ্টির সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে হয়েছে জনতাকে। উদ্যোক্তাদের দাবি, এ বছর বৃষ্টির জন্য মণ্ডপগুলিতে ভিড় হয়েছে কম। সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোত্সব কমিটির সহকারী সম্পাদক চঞ্চল চৌধুরী ও দেহশ্রী ব্যায়ামাগার পুজো কমিটির সম্পাদক সৌমেন সাহার দাবি, ‘‘এবছর বৃষ্টির জন্য পুজোমণ্ডপে অনেক কম দর্শনার্থী এসেছিলেন।’’ ফি বছর পুজোর সময় দিনের বেলায় পরিযায়ী পাখি দেখতে কুলিক পক্ষিনিবাসে বাসিন্দা ও পর্যটকরা ভিড় জমান। এ বার সেই ভিড়ও ছিল না।

বৃষ্টির জন্য বাড়িতেই বসে কাটিয়েছেন অনেকেই। দিনহাটার বাসিন্দা চাকুরীজীবি সুভদ্রা সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘কর্মসূত্রে মালবাজারে থাকি। পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরেছি। যা বৃষ্টি হল তাতে আর বেরোনোর সাহস পাইনি। বাড়িতে বসেই কখনও টেলিভিশনে কখনও ফেসবুকে পুজোর আনন্দ নিয়েছি।” কোচবিহার সুনীতি অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা রূপশ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর চারদিন চারটি শাড়ি পড়ব বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। ষষ্ঠীর দিন নতুন শাড়ি পড়ে বেরিয়ে ভিজে যাই।’’ সপ্তমী, অষ্টমী আর বাড়ি থেকে বেরোননি তিনি। পুজোয় ভালভাবে ঘুরতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বিল্লোল সরকারেরও।

দশমীর বিকেলে ঘাটে লোক জমা শুরু হয়েছিল সবে। পাঁচটা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হতেই ফাঁকা হয়ে যায় জলপাইগুড়ির বাবুঘাট, কিংসাহেবের ঘাট। ওই দু’টি ঘাটে রাবণ পোড়ানো দেখতে ফি বছরই ভিড় উপচে পড়ে। অনেকেই আশা করেছিলেন কিছু পরেই বৃষ্টি থেমে যাবে। কিন্তু বৃষ্টি কমেনি। রাত ১০টা নাগাদ তার মধ্যেই রাবণ পোড়ানো হয় কোনও রকমে। বৃষ্টির মধ্যে অনেক প্রতিমাই বিসর্জন দিতে পারেননি উদ্যোক্তারা।

বুধবার দিনভরও বৃষ্টি হয়। রাতেও বৃষ্টি কমেনি অনেক জায়গায়। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার, মহরমের তাজিয়া দেখতে উপচে পড়া ভিড়ও নজরে আসেনি। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি খোকন মিয়াঁ বলেন, “বৃষ্টি এবারে সব উৎসব মাটি করে দিল।” শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোডে তাজিয়া দেখতে ফি বছর ঠাসাঠাসি ভিড় হয়। মেলার আয়োজন হয়। এ বার বর্ধমান রোডে কিছুটা এলাকায় ছাউনি দিয়ে মেলার আয়োজন হয়েছে। কিন্তু, ঠাসঠাসি ভিড় না থাকায় হতাশ অনেকেই।

টানা বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে ব্যবসাও। পুজো দেখতে ঘণ্টা পিছু ২০০ টাকা ভাড়া টোটোর। অটোর দর ২৫০ টাকা। ছোট গাড়ি ৩০০ টাকা। কিন্তু, পুজোর চারদিনের মধ্যে তিন দিনই তেমন ভাড়া হয়নি।

গোপাল সরকার, নন্দু শর্মার মতো চালকরা জানান, অনেকে আগাম বলে রেখেও বৃষ্টির জন্য ঠাকুর দেখতে বার হননি। সওয়ারি না মেলায় সমস্যায় পড়েছেন রিকশা চালকরাও। রিকশাচালক বীরেন রায়, মজিবুর শেখ জানান, পুজোর সময়ে সারা রাত রিকশা চালিয়ে বাড়তি আয়ের সুযোগে জল ঢেলে দিয়েছে বৃষ্টি।

ভাড়ার গাড়ি অঢেল থাকলেও সওয়ারি জোটেনি অনেক পর্যটন কেন্দ্রেই। যেমন মালবাজারে বাসিন্দা আবির মজুমদার নবমীতে সপরিবারে মালবাজারে পৌঁছে গিয়েছিলেন। একমাত্র ছেলের সদ্য বিয়ে হয়েছে। নতুন বৌমাকে ডুয়ার্স ঘোরানোর ইচ্ছে থাকলেও বৃষ্টিতে সেটাও হল না বলে জানালেন তিনি।

গাড়ির ব্যবসায়ী যাদের বুকিং প্রায় তিন মাস আগেই হয়ে গিয়েছিল তাদেরও দিনের শেষে মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে। কলকাতার একটি দল নবমী থেকে লক্ষী পুজো পর্যন্ত চালসার গাড়ির ব্যবসায়ী গোপাল সরকারের গাড়ি বুক করে রেখেছিলেন। ঠিক সময়ে পর্যটকরা পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির জেরে এক দিন ঘুরেই পরিকল্পনা বাতিল করেন তারা। গোপালবাবু বলেন, ‘‘অক্টোবরের মাঝামাঝি যে আকাশ পরিষ্কার হবে না তা তো ভাবতেই পারিনি। পর্যটকদের দোষ কি?’’

ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালও উদ্বিগ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর আনন্দটা বৃষ্টির জন্য অনেকটাই মাটি হয়ে গিয়েছে। বেড়াতে আসা অন্তত ৩০ হাজার পর্যটক বিপাকে পড়েছেন। স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীদের তো মাথায় হাত পড়েছে। এই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে তা কে জানে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Puja small businessmen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE