Advertisement
E-Paper

আষাঢ়ে গল্পে জড়িয়ে থাকে অদেখা নূপুর

বর্ষার সন্ধ্যা-রাতে বাঙালির সাবেক খাবার মুড়ি, তেলেভাজা আর অনুপান আষাঢ়ে গল্প। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি, ভিতরে গল্প শুনে গা ছমছম। সে গল্প যা খুশি হতে পারে। কিন্তু গল্পের গরুকে গাছে উঠতেই হবে। উত্তরবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তেমনই কিছু আষাঢ়ে গল্প সংগ্রহ করেছেন অনিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৮:০৯
সিকিমে হরভজনের মন্দির।

সিকিমে হরভজনের মন্দির।

ক্লাবে এখনও হইচই

শহর জলপাইগুড়ি বদলে গিয়েছে অনেক। কিন্তু ক্লাব রোডের ইউরোপিয়ান ক্লাব, যেখানে চা বাগানের সাহেবরা ছুটির দিনে সপরিবার চলে আসতেন, নাচা-গানা খানাপিনা চলত রাতভর, তা এখনও সেই মেজাজটা লুকিয়ে রেখে দিয়েছে বলে মনে করেন শহরের অনেকেই। মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস জানালেন, ১৯৮৮ সালে ওই ক্লাবের কাছেই সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার সময় স্কুলের কোয়ার্টারে লোকমুখে শুনেছিলেন, এখনও গভীর রাতে সেই নাচ গানের হই হুল্লোড়ের আওয়াজ শোনা যায়। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িগামী জাতীয় সড়কে ভুটকির হাট এলাকায় সাদা শাড়ি পরে এক বৃদ্ধা রাস্তা পার হন, এমনটাও অনেকে নাকি দেখেছেন।

লিফট চান সুন্দরী

লাটাগুড়ি থেকে চালসাগামী দীর্ঘ পিচ রাস্তার দু’পাশে ঘন জঙ্গল। যখন তখন বেরিয়ে আসে হাতির দল। পথ আটকে দাঁড়ায়। সত্যিকারের এই ছবিটির পাশেই রয়েছে একটি আষাঢ়ে গল্প। একটি বাচ্চা ছেলে মাঝেমধ্যেই হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে গাড়ির সামনে। ও দিকে বানারহাট থেকে গয়েরকাটা যাওয়ার রাস্তায় বিন্নাগুড়ির আগে পরিত্যক্ত এয়ারপোর্ট এলাকায় পথের ধারে গয়নাগাটি পরা এক সুন্দরীর দেখা পেয়েছেন নাকি অনেকে। হঠাৎ দেখা দিয়ে তিনি গাড়ি থামিয়ে লিফট চান। গাড়ি চালকদের অনেকে সে দিকে রাতবিরেতে যেতে এখনও ভয় পান।

লাইনের ধারে আলো

জলপাইগুড়ির শহরতলির পিলখানার কাছাকাছি সানুপাড়ার কাছে ব্রহ্মোত্তর পাড়ায় রেললাইনের ধারে আলো জ্বলে থাকতে দেখেছেন অনেকেই। তরুণ প্রজন্মের রাজেশ সরকারের কথায়, ‘‘আলোটি বহু বার দেখেছি। কখনও কখনও আলোটি রেললাইনের ধার ঘেঁসে এগিয়ে আসে। কখনও বা নিভে যায়।’’ আবার ওই এলাকার রেললাইনের ধারের অনেক বাড়িতে এক কিশোরী রাতে খেতে চায় বলেও জানান অনেকে। এই এলাকায় অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মনোবিদেরা বলেন, সে সব ঘটনাই মানুষের মনে এমন ভাবে চেপে বসেছে যে তাঁরা নানা কাহিনি কল্পনা করেন।

সৈনিক হরভজন

লৌকিক আর অলৌকিকের সীমানা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাবা হরভজন সিংহের মন্দির। সিকিমে গিয়েছেন অথচ এই মন্দিরটি কেউ দেখেননি, এমন পর্যটকের সংখ্যা কম। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে ২২ তম পঞ্জাব রেজিমেন্টের কর্মরত জওয়ান হরভজর নাথু লা-র এক গিরিখাতে পড়ে প্রাণ হারান। তারপর? এক সহকর্মীকে স্বপ্ন দিয়ে জানান, তাঁর নামে তৈরি হোক স্মৃতি মন্দির। নাথু লা এবং জেলেপ লা-র মধ্যে গড়ে ওঠে মন্দিরটি। জওয়ানদের অনেকের বিশ্বাস তিনি এখনও সীমান্তে প্রহরা দিচ্ছেন। তাঁরই সৌজন্যে নাকি খাদের ধারে বারবার বেঁচে যায় ভারতীয় সৈন্যদের ট্রাক। কোনও সৈনিক বিপদের মুখে চলে গেলে হরভজন তাঁকে বাঁচিয়ে দেন। বারবারই এমন নানা অলৌকিক ঘটনা জড়িয়ে যায় তাঁর নামের সঙ্গে। হরভজনের তাই পদোন্নতি হয়, বছরে এক মাস ছুটি বরাদ্দ হয়, টিকিট কাটা হয় ট্রেনে, বেতন পান, তা পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে।

লীলার প্রতীক্ষা

রাজা মহীপালের সঙ্গে শ্রেষ্ঠীর কন্যা লীলার পরিচয় ও প্রণয়কাহিনির সূত্রপাত মহীপাল দিঘি ঘিরে। এক সময় দু’জনের বিচ্ছেদ ঘটে। সেই পর্বে মহীপালের জন্য এই দিঘির ধারেই অপেক্ষা করতেন লীলা। সেই অপেক্ষা মানুষের কল্পনায় স্থির হয়ে রয়ে গিয়েছে। এখনও কোনও তরুণীকে সেই মহীপালের দিঘির পাশে দেখা যায়। শোনা যায়, দূর থেকে ছুটে আসছে ঘোড়া। রায়গঞ্জের বাসিন্দা লেখক কমলেশ গোস্বামী জানালেন কুলিক নিয়ে আর একটি গল্প। কুলিক সংলগ্ন ঘাট কালীবাড়ি থেকে করুণাময়ী কালীবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০০ মিটার। এ পথেই অমাবস্যায় অদেখা নূপুরের ধ্বনি শুনেছেন এলাকার অনেকেই।

বন্দরে ছোটে ঘোড়া

কোচবিহার শহরের পাতাকুড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত ‘সাবিত্রী লজ’ থেকে মধ্যরাতে বিচিত্র শব্দ ভেসে আসার কথা লোকমুখে শোনা যায়। সাগরদিঘির দক্ষিণ দিকে রাজ আমলের নির্মিত ভবনগুলি, মতিমহল, ভিক্টর প্যালেস, খেলাঘর, রাজবাড়ির ঘোড়াশালা, কেশব আশ্রম ঘিরেও এমন গল্প রয়েছে বলে জানালেন কবি জ্যোতির্ময় ঘোষ। কোচবিহারের মহারাজাদের পোলো গ্রাউন্ড যা এখন বিমানবন্দর, সেখানে আজও ঘোড়ার খুড়ের শব্দ পান কেউ কেউ। পাশের প্রাচীন শালের জঙ্গলে মিলিয়ে যায় সেই শব্দ।

(ক্রমশ)

North Bengal Rainy season
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy