Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিপদে ফুলহার, ত্রাণে শুধু ত্রিপল

ভেঙে গিয়েছে গত দেড় দশকের রেকর্ড। চরম বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার। ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে দুর্গতের সংখ্যাও।

ফুলহার বাঁধে আশ্রয়। বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর নিহাহাটে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।

ফুলহার বাঁধে আশ্রয়। বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর নিহাহাটে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

ভেঙে গিয়েছে গত দেড় দশকের রেকর্ড। চরম বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার। ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে দুর্গতের সংখ্যাও। কিন্তু জলবন্দি বাসিন্দারা গত চার দিন ধরে ত্রিপলের বেশি কিছু পাননি বলে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। এলাকার মানুষ যাকে বন্যার ঘোলাজলে রাজনীতির মাছ ধরার চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, আগে তো দুর্গতদের সমস্যার সমাধান হোক।

সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, চরম বিপদসীমা পেরিয়ে গেলেও এ দিন দুপুরের পর আর আর নদীর জল বাড়েনি। বিহারের কচোড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা ফুলহারের বাঁধ কেটে দিয়েছেন। তার পর থেকেই ফুলহারের জল কাটিহারের দিকে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় নদীর জল আপাতত স্থিতিশীল হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলহারের জলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের অসংরক্ষিত এলাকার সাত হাজার পরিবার। এ ছাড়া রতুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দু হাজার পরিবার। সব মিলিয়ে বন্যা দুর্গতের সংখ্যা প্রায় তিরিশ হাজার। কিন্তু দুর্গত বাসিন্দারা প্রশাসনের ত্রাণ শিবিরে না এসে নিজের মতো করে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। অধিকাংশই আবার নদীর ওপারে বিহারের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা এ ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ত্রাণ বিলি করতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।

এ দিন বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যান হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলম। পরে তিনিই অভিযোগ করেন, ত্রাণের মধ্যে ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয়নি।

তাঁর কথায়, আরে, মানুষ মারা যাওয়ার আগে ত্রাণ দেওয়া হবে তো, নাকি! বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকায় তিনি দুর্গতদের কেরোসিন তেল দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। চাঁচলের মহকুমাশাসক পুষ্পক রায় অবশ্য বলেন, ত্রিপল ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি— এ কথা ঠিক নয়। এ দিন থেকে দুর্গতদের শুকনো খাবার ও জলের পাউচ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নৌকায় ত্রাণ পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগছে। দুর্গতদের প্রত্যেককেই ত্রাণ দেওয়া হবে।

যাঁদের নিয়ে এই টানাপড়েন, সেই দুর্গতরা কী বলছেন? ঘরদোর ডুবে যাওয়ায় পরিবারের সাত জনকে নিয়ে ফুলহারের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন মিহাহাটের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। নিজের একটি পুরনো ত্রিপল খাটিয়েই রয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, খাবার দূরের কথা, এখনও একটা ত্রিপলও জোটেনি। দিয়ারার কমল মণ্ডল, সুভাষ মণ্ডলরা বলেন, দু’দিন ধরে বাঁধে রয়েছি। কিন্তু ত্রিপল ছাড়া কিছু জোটেনি! আত্মীয়স্বজনরা কিছু খাবার দিয়েছে। তা খেয়েই দিন কাটছে।

এর পাশাপাশি এ দিন হরিশ্চন্দ্রপুরের গোবরাহাটে রিং বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। রিং বাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও তা নিম্নমানের বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগে ঘিরে এ দিন দুপুরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান বাসিন্দাদের একাংশ। এমনকী, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। ফলে ঠিকাদারের শ্রমিকরা একসময় কাজ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিকেল থেকে ফের কাজ শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Relief camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE