E-Paper

বকেয়া টাকা মিলতেই দিতে হচ্ছে ‘দাদাদের’

গ্রামের ‘প্রভাবশালীদের’ কাছে অধিকাংশের জব-কার্ড রয়েছে। সুজাপুরের এক উপভোক্তা বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্প চালুর সময় থেকেই গ্রামের মাতব্বরদের বাড়িতেই জব-কার্ড রয়েছে।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৩
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

১০০ দিনের প্রকল্পের প্রাপ্য বকেয়া থেকেও ‘কাটমানি’ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করলেন মালদহের প্রকল্পের উপভোক্তাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের দিকে। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রকল্পের এই ‘উপভোক্তাদের’ ক’জন প্রকৃতই ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদিও সরকারি ‘মাস্টাররোলে’ তাঁদের নাম রয়েছে। মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া শনিবার বলেন, ‘‘ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শনিবার সকাল ৮টা। মোবাইলে এসএমএস দেখে মুখে হাসি ফোটে কালিয়াচকের গয়েশবাড়ি গ্রামের দিলরুবা বিবির (নাম পরিবর্তিত)। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যে ফিকে হয়ে যায় তাঁর হাসি। তাঁর দাবি, “মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারি, ১০০ দিনের প্রকল্পের বকেয়া ১,৮০০ টাকা ঢুকেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতে হাজির গ্রামের ‘দাদারা’। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়ে টাকা তুলে তাঁদের হাতে অর্ধেকের বেশি দিয়ে দিতে হয়েছে।” ‘দাদারা’ কারা? মহিলার দাবি, ‘‘ওঁরা ঘাসফুলের।’’

শুধু তাঁরই নয়, প্রকল্পের বকেয়া টাকা ঢুকতেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে দিতে হচ্ছে বলে দাবি কালিয়াচক, সুজাপুর, বৈষ্ণবনগর, মোথাবাড়ির বহু উপভোক্তার। কারণ, গ্রামের ‘প্রভাবশালীদের’ কাছে অধিকাংশের জব-কার্ড রয়েছে। সুজাপুরের এক উপভোক্তা বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্প চালুর সময় থেকেই গ্রামের মাতব্বরদের বাড়িতেই জব-কার্ড রয়েছে। প্রকল্পের বকেয়া রাজ্য সরকার দিতেই মাতব্বরেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে আমাদের টাকা তুলে তাঁদের হাতে দিতে বলছেন।” কেন মাতব্বরদের টাকা দিচ্ছেন? ওই উপভোক্তা জবাব না দিলেও বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “এঁদের অনেকেই প্রকল্পে কাজ করেননি। সে দুর্নীতির কারণে ১০০ দিনের প্রকল্পের বরাদ্দ কেন্দ্রের সরকার বন্ধ করেছে। ভোটের মুখে তৃণমূল সন্দেশখালির শাহজাহানের মতো দলের সম্পদদের সুবিধা দিতেই ঘুরিয়ে এ ভাবে প্রকল্পের টাকা তোলাচ্ছে।”

তবে অভিযোগও হচ্ছে। মানিকচকের বাসিন্দা আজমিরা বিবি বলেন, “১০০ দিনের বকেয়া থেকে এক থেকে দেড় হাজার করে টাকা দিতে হচ্ছে। গ্রামসভায় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সে কথা জানানো হয়েছে।” মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের তপতী মজুমদার বলেন, “এ রকম শুনেছি। লিখিত অভিযোগ নেই। উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে, কাউকে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ টাকা নিলে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে।” তবে কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, হরিশ্চন্দ্রপুরের মতো ব্লকে বহু উপভোক্তার বক্তব্য, লিখিত অভিযোগ করার ‘পরিস্থিতি’
তাঁদের নেই।

মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। রাজ্য সরকার সে টাকার ব্যবস্থা করেছে। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ হলে, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Malda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy