রায়ডাক নদীর জল এ ভাবেই দূষিত হচ্ছে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
শহরের বাজার লাগোয়া মরা রায়ডাক নদীর খাত ক্রমশ হয়ে উঠছে আবর্জনা ফেলার ‘ডাস্টবিন’। দুর্গন্ধে তাই নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার খানিকটা দূরে বয়ে চলা রায়ডাক নদীর এখনকার গতিপথ লাগোয়া জমিও হয়ে উঠেছে শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ড। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনা জলে মিশছে। এবার তুফানগঞ্জ পুরভোটে তাই নদী দূষণ অন্যতম ইস্যু।
নদী দূষণকে প্রচারের হাতিয়ার করেছে পুরসভার বিরোধী দল তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেস। টানা প্রায় দেড় দশক পুরসভায় ক্ষমতাসীন বামেরা অবশ্য পাল্টা প্রচারে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। নদী রক্ষায় একাধিক প্রকল্পের কথাও বলা হচ্ছে। সবমিলিয়ে রায়ডাক নদীর দূষণকে কেন্দ্র করে তরজা জমে উঠেছে।
বাসিন্দারা জানান, তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকার গা ঘেষে বয়ে গিয়েছে রায়ডাকের বর্তমান প্রবাহ। শহরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া ওই নদীর পাড়ে একসময় পুরসভার তরফে সৌন্দর্যায়ণ করা হয়েছিল। কিন্তু, তা বেশিদিন টেকেনি। তারপর আর কোনও কাজ হয়নি। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক পেরোলেই নদীর ধারে বিবেকানন্দ হাইস্কুল ও শ্মশান লাগোয়া এলাকায় পুরসভার কেনা প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনার স্তূপ জমেছে। অভিযোগ, পরিকল্পিত ডাম্পিং গ্রাউন্ড না হওয়ায় সেখানকার আবর্জনাই বৃষ্টি হলে ভেসে গিয়ে মিশছে নদীর জলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে ওই ব্যাপারে পুরসভার কাছে অভিযোগ জানিয়েও আখেরে লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা জানান, কয়েক দশক আগেও এখনকার মরা রায়ডাকের খাত দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নৌবাণিজ্য চালু ছিল। বদলে যাওয়া ওই নদী খাতে এখন রোজ আবর্জনার ডাঁই জমছে। শহরের বাজার ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দুর্গন্ধে বাসিন্দারা জেরবার হলেও দূষণরোধে পুরসভার গরজ নেই।
পুরভোটের প্রচারে নদী দূষণের ওই ইস্যুতে বামেদের বিঁধছেন বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের তুফানগঞ্জ শহর কমিটির সভাপতি হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তুফানগঞ্জ পুরসভায় পরিকল্পিত ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য বহুবার দাবি জানালেও কাজ হয়নি। বাজারের কাছে মরা রায়ডাক আর্বজনার স্তুপে ঢাকা পড়েছে। অন্যদিকে পুরসভার ফেলা আবর্জনাতে নদীর বর্তমান প্রবাহপথেও আর্বজনা মিশছে। বর্তমানে নদী রক্ষায় সর্বত্র গুরুত্ব দেওয়া হলেও পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। এভাবে গভীরতা কমে যাওয়ায় শহরে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এসবই প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি বিমল সরকার বলেন, “রায়ডাক তুফানগঞ্জ শহরের লাইফ লাইন। অগ্নিকান্ডের বিপদ হলে শহর রক্ষায় ওই নদীর জল মূল ভরসা। সেখানে আবর্জনার দূষণ দিনদিন বাড়ছে। মরা রায়ডাক সংস্কার করে নৌকাবিহার, পার্কের মত অনেক কিছু করা যেত। পুরসভা ওই কাজেও ব্যর্থ। এসব কিছু নিয়ে প্রচারে আমাদেরও বলতে হচ্ছে।” তুফানগঞ্জের কংগ্রেস নেতা দেবেন বর্মাও বলেন, “ দূষণরোধে পুরসভার উদাসীনতায় রায়ডাকের নতুন ও পুরানো খাতের অবস্থা রীতিমতো উদ্বেগজনক।’’
বামেরা অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, বাম আমলেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য শ্মশান লাগোয়া এলাকায় ১০ বিঘা জমি কেনা হয়। ওই জমি নীচু থাকায় তা ভরাট করতে কিছুদিন আবর্জনা ফেলা হলেও নদীতে আবর্জনা মেশেনি। বিদায়ী পুরবোর্ড নদীর ওপারে ৪০ বিঘা জমি কেনার পরিকল্পনাও পাকা করে ফেলেছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে ওই এলাকায় বাড়ি বাড়ি সংগৃহীত আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ৪০ বিঘা জমি কেনা হলে সেখানে নতুন করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা হবে।
বাজার লাগোয়া মরা রায়ডাক সংস্কারে প্রকল্প তৈরি করে সেচ দফতরে পাঠান রয়েছে। পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান সিপিএমের সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “ পুরসভা নদী দূষণ রুখতে সজাগ রয়েছে। মরা রায়ডাক খাত খনন করে সৌন্দর্যায়ণ প্রকল্পে সেচ দফতরের অনুমোদন না মেলায় কাজ করা যায়নি। বর্তমান রায়ডাক খাতেও দূষণ এড়াতে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ অনেকটা এগিয়েছে। ৪০ বিঘা জমি কেনা হলে সমস্যা থাকবেনা। ওই ব্যাপারে কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে রেখেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy