Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

শিলিগুড়ি যেন যানজটগুড়ি!

গত সপ্তাহে নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে পরিচিত রোগীকে দেখতে এসেছিলেন নির্জল দে। যানজটের জন্য জংশন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম পৌঁছতে নির্জলবাবুর ৪০ মিনিট লেগেছিল।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

সকাল বিকেল দার্জিলিং মোড়ের ধারেকাছেও যান না, বিকাশ সেন। পরিবহণ নগরী লাগোয়া সরকারি দফতরে আসা যাওয়া করতে বিকাশবাবুর ভরসা ঝংকার মোড়, তুম্বাজোত হয়ে মাটিগাড়া যাওয়ার রাস্তা। তাঁর কথায়, ‘‘দার্জিলিং মোড় হয়ে যাতায়াত করব? পাগল না কি! ২ কিলোমিটারের রাস্তা পার হয়ে আধঘণ্টা লেগে যায়।’’

Advertisement

গত সপ্তাহে নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে পরিচিত রোগীকে দেখতে এসেছিলেন নির্জল দে। যানজটের জন্য জংশন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম পৌঁছতে নির্জলবাবুর ৪০ মিনিট লেগেছিল।

শুধু বিকাশবাবু বা নির্জলবাবু নন, শহর শিলিগুড়ির অধিকাংশ বাসিন্দাই যানজট নিয়ে তিতিবিরক্ত। বাসিন্দারা জানান, বাস থেকে টোটো, সাইকেল থেকে রিকশা, ভ্যান থেকে ছোট গাড়ি- রাস্তা দিনভর দখল করে থাকে। পাহাড় ও সিকিম থেকে অন্তত দু’হাজার গাড়ি নিচে নামে। সব মিলিয়ে রাস্তায় বার হলে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা হয়। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলছিলেন ‘‘রাস্তায় বেরোতে ভয় করে। কখন ঘাড়ে কোন গাড়ি উঠে পড়ে। শহরটার নাম যানজটগুড়ি দিলেও ভুল নেই।’’ তেমনই, পর্যটন সংস্থার কর্তা সম্রাট সান্যাল গাড়ি ছেড়ে স্কুটি নিয়ে ঘোরাফেরা শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ি যে কোথায় ফেঁসে যাবে কে জানে! স্কুটি নিয়ে তাও কিছুটা এগোনো যায়।’’

শিলিগুড়ি শহরে সকাল ৮টা থেকে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে। ট্রাফিক থাকে রাত ৯টা অবধি। হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোড, স্টেশন ফিডার রোড, সেবক রোড, বিধান রোড, কাছারি রোড, দুই মাইলের মত বড় রাস্তায় গাড়ি, দোকানদারেরা রাস্তা মালপত্র দিয়ে দখল করে রাখে। চম্পাসারি, জলপাইমোড়, ঝংকার মোড়, সুভাষপল্লি-মত একাধিক রাস্তা জুড়ে বসে বাজারও। অটো এবং টোটো চালকদের তো সর্বত্রই স্ট্যান্ড। হাসপাতাল মোড, বিধানরোড, ডুয়ার্স বাসস্ট্যান্ড, এয়ারভিউ মোড়, মাল্লাগুড়ির মত কিছু জায়গায় রাস্তা দেখাই যায় না।

Advertisement

শহরে রাস্তার থেকে গাড়ির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায় এই পরিস্থিতি বলে পুলিশ, পুরসভার কর্তারাও মনে করেন। বছর কয়েক আগে ‘রাইটসে’র করা সমীক্ষায় বলা হয়, দেশের একমাত্র শহর শিলিগুড়ি যেখানে রিকশা, সাইকেলের সঙ্গে একই রাস্তায় বাস চলে। অবিলম্বে যান নিয়ন্ত্রণ এবং উড়ালপুলের পথে না হাঁটলে শিলিগুড়িকে অবিরুদ্ধমুক্ত করা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি পুলিশের তরফে শহর লাগোয়া ইস্টার্ন বাইপাস, নৌকঘাটে বড় গাড়ি চালানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। শহরের কোর্টের পাশে থাকা লোকাল বাসস্ট্যান্ডটিকেও পুলিশ অন্যত্র সরানোর পক্ষপাতি। পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি চিন্তার। আমরা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টা করছি।’’

পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারকেই সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে টোটো, অটো বা রিকশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, যানজটের সমস্যা কমতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.