E-Paper

রাজ্য ভাগের ভাবনার বিরুদ্ধে হঠাৎ কেন প্রচারে তৃণমূল, চর্চা

দলীয় সূত্রের খবর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়ির রাজবংশী মানুষের মধ্যে রাজ্য নিয়ে আবেগ রয়েছে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৯
বৈঠক: সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। ছবি: স্বরূপ সরকার

বৈঠক: সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। ছবি: স্বরূপ সরকার

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং আলাদা রাজ্যের দাবিকে নতুন করে নস্যাৎ করে বিজেপির বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। অসমে যারা রাজ্য ভাগের বিপক্ষে সওয়াল করে, সে দলের জন প্রতিনিধিরা এ রাজ্যে কী করে রাজ্য ভাগের পক্ষে কথা বলেন, তুলেছে সে প্রশ্ন। বুধবার রাজ্য ভাগের ভাবনার বিরুদ্ধে শেষ রক্ত দিয়ে লড়াইয়ের দাবিও করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ থেকে শুরু করে সাংসদ শান্তা ছেত্রী, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গোপ, উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল-সহ ছয় জেলার শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু বছরের শুরুতেই হঠাৎ এই ‘হুঙ্কারের’ পিছনের কারণ নিয়ে চর্চা চলছে উত্তরবঙ্গে।

স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, ভোটের জন্য বিজেপি এবং তৃণমূল—দুই দলই উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ নিয়ে ‘খেলা করছে’। আর এক দলের অনুমান, শিক্ষা ক্ষেত্রে, সরকারি নিয়োগে, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রাপক তালিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে শাসক দল। তাদের নেতাদের মধ্যে অনেকে হয়েছেন গ্রেফতার, অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রোজ সামনে আসছে। ‘দিদির দূত’ বা ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়েও নানা অভাব-অভিযোগ টের পেয়েছে শাসক দল। সে দিকে নজর রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে জোটবদ্ধ ভাবে সরব হল তৃণমূল।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত আর লোকসভা ভোট আসছে বোঝা যাচ্ছে। বিজেপি, তৃণমূল—দুই দলই মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। ভোট চলে গেলেই, সব মিটে যাবে। আর যাঁরা আলাদা রাজ্যের দাবিদার, তাঁরা হয় বিজেপি নইলে তৃণমূলের সঙ্গেই থেকেছেন বা রয়েছেন।’’

দলীয় সূত্রের খবর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়ির রাজবংশী মানুষের মধ্যে রাজ্য নিয়ে আবেগ রয়েছে। তাই গ্রেটার কোচবিহার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত রায়, বংশীবদন বর্মন বা কেএলও প্রধান জীবন সিংহের মুখে আলাদা রাজ্যের দাবি লেগেই থাকে। বিজেপির কিছু জন প্রতিনিধিও এই দাবিকে সামনে এনেছেন জোরালো ভাবে। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল শিলিগুড়িতে এসে উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে, স্পষ্ট করে দেন, রাজ্য ভাগের বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। একই কথা বলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।

ইতিমধ্যে তৃণমূল স্তরে খোঁজখবর নিয়ে শাসক দলের এই ধারণা হয়েছে যে উত্তরবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও রাজ্য ভাগের ‘তত্ত্বে’ বিশ্বাস করছেন না। তাই উত্তর এবং দক্ষিণ বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের আবেগের কথা মাথায় রেখে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে, রাজ্য ভাগের প্রশ্নে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে চাইছে তৃণমূল।

যদিও বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আনন্দময় বর্মণের দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতারা দুর্নীতিতে যুক্ত। সে দিক থেকে জনতার নজর ঘোরাতেই তারাই বেশি করে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ বেশি করে তুলছে।’’ গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় আলাদা রাজ্যের দাবি তুলতে শোনা গিয়েছিল আনন্দকে। এ দিন অবশ্য তিনি দাবি করেন, বিজেপি কখনও বলেনি তারা রাজ্য ভাগ করে দেবে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করলে, করে দিতেই পারে। তবে উত্তরবঙ্গের মানুষ ‘বঞ্চিত’।

তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্য ভাগে বিজেপির অনেকে উস্কানি দিচ্ছেন। এর পাল্টা বক্তব্য নিয়ে ময়দানে না নামলে, দেরি হয়ে যেত।’’ তিনি জানান, দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গে বিজেপিকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা দেওয়া হয়েছে। কোচবিহার ছাড়া, দার্জিলিং পাহাড়েও আলাদা রাজ্যের দাবি রয়েছে।

তৃণমূলের দাবি, সে দাবির শরিক বিজেপি বিধায়কেরাও। সে প্রসঙ্গে এ দিনই প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘পুরোটাই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিষয়। ওরাই বলুক, কী হবে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy