Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Malnutrituion

ঢেঁকি শাক আর কচুর লতিই ভরসা

ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় পাঁচ মাস অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ থাকার ফলেই পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে?

নিরুপায়: মেয়েদের নিয়ে শাক তুলছেন সুস্মিতা।

নিরুপায়: মেয়েদের নিয়ে শাক তুলছেন সুস্মিতা। ছবি: নারায়ণ দে।

পার্থ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৭:৩৬
Share: Save:

বক্সার জঙ্গল আর মাঝেরডাবরি চা বাগানের মধ্যে কালকূট বনবস্তি। সেখানেই থাকেন সুস্মিতা সাংমা। বাঁশের বেড়া আর টিন দিয়ে তৈরি ভাঙাচোরা ঘরে পাঁচ মেয়েকে নিয়ে বাস তাঁর। বড়টির বয়স দশ বছর। আর ছোটটির দুই। স্বামী দিল্লিতে কাজ করেন। প্রতি মাসে এক-দু’হাজার টাকা পাঠান। তাতে সংসার চলে না। তাই রোজ জঙ্গল থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে যান সুস্মিতা। কিন্তু তাতেও দিনে একশো টাকাও আয় হয় না। এই ভাবেই দিন গুজরান হচ্ছিল।

কিন্তু গত কিছু দিন ধরে একটা চিন্তাই সুস্মিতার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। “বাচ্চাগুলো কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়ছে”,—সব সময় এটাই ভাবাচ্ছে তাঁকে। জঙ্গল আর আগাছা থেকে ঢেঁকি শাক তুলছিলেন তিনি। একটি শিশু তখন তাঁর পিঠে বাঁধা। আরও দুটি শিশু তাঁর দু’পাশটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। ওদের দেখিয়েই সুস্মিতা বললেন, “আগে ওরা সেন্টারে (অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র) যেত। ওখানে খাবার দিত। মাঝে সেন্টারে রান্না বন্ধ হলেও বাড়িতে প্যাকেট আসত। তাতে যা থাকত, সেটাই ওদের রান্না করে খাওয়াতাম। এখন বেশির ভাগ দিন শুধু ঢেঁকি শাক আর কচুর লতিই ভরসা। তাই হয়তো ওজন কমছে।”

এই সমস্যা কিন্তু শুধু কালকূট বনবস্তির সুস্মিতার একার নয়। গোটা আলিপুরদুয়ার জেলাতেই তা যেন বাড়ছে। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর মাসে আলিপুরদুয়ারে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা বা কম ওজনের শিশু ছিল ১৯২ জন। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে মে মাসে সেই সংখ্যাটা প্রায় চার গুণ বেড়ে হয়েছে ৭৪৬ জন। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “গত মাসের এই সমীক্ষায় আমরা সব বাড়িতে যেতে পারিনি। সেটা হলে সংখ্যাটা কোথায় পৌঁছবে, কে জানে!’’ জেলায় যে হু হু করে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, তা মেনে নিচ্ছেন ওই দফতরের আধিকারিকদের আরও অনেকে।

তবে কি ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় পাঁচ মাস অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ থাকার ফলেই পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে? সে কথা মানতে নারাজ আধিকারিকদের অনেকে। তাঁদের কথায়, করোনা পরিস্থিতিতে কড়া বিধিনিষেধে অনেক বাড়িতে পুরুষদের কাজ চলে গিয়েছে। ফলে শিশুদের বাড়িতে ফেলে রেখে মহিলারা কাজে বার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এবং তাতেও শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে যত্ন পাচ্ছে না বলেই তাঁদের দাবি। দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। রাজ্য থেকে শিশুদের জন্য বরাদ্দ খাবার ওদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ আবারও শুরু হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলাস্তর থেকেও ওদের আরও কিছু পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়টি নিয়েও প্রশাসন ভাবছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICDS Malnutrituion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE