উদ্ধারের পর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
এ যেন পুলিশের হাত ধরে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার গল্প।
রাতের হিলকার্ট রোডে ঘুরপাক খাচ্ছিল ছোট্ট একটি মেয়ে। কখনও ফুটপাতে দাঁড়ি্য়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল, কখনও বা ভয় পেয়ে ব্যস্ত হিলকার্ট রোডের এ পার ওপারে ছুটে যাচ্ছিল। রাতের শহরের তির বেগে ছুটে যাওয়া গাড়ি দেখে কখনও বা মাঝরাস্তাতেই ভয় পেয়ে থমকে যাচ্ছিল মেয়েটি। ঘড়িতে তখন দশটা বেজে গিয়েছে। সুনসান হতে শুরু করেছে সদাব্যস্ত হিলকার্ট রোড। রাস্তায় একরত্তি এক মেয়েকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখে এগিয়ে আসেন এক পথচারী। মেয়েটির কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চান। ভ্যাবাচাকা মেয়েটি প্রথমটায় কিছুই বলতে পারেনি, ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। ওই পথচারী তখন খবর দেন ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মী সুভাষ রায়কে। ডিউটি সেরে ওই কর্মী তখন উর্দি খুলতেও শুরু করেছিলেন নিজের ক্যাম্প অফিসের সামনে। কোনমতে ফের উর্দি গলিয়ে এগিয়ে যান সুভাষবাবু। মেয়েটির জন্য কিনে নেন কেক-জলের বোতল। পথচারীর উধ্যোগে উদ্ধার করে মেয়েটিকে থানায় নিয়ে যাওযা হয়। ততক্ষণে পথচারীর ফোন পয়ে থানায় চলে এসেছিলেন শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার। থানায় ছিলেন আইসি দেবাশিস বসুও। পুলিশের উদ্যোগে রাতেই হোমে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েটি।
মেয়েটিকে প্রথম দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া ওই পথচারীর কথায়, ‘‘মেয়েটি তখন থরথর করে কাঁপছিল। এবং জিজ্ঞেস করছিল এটা কোন জায়গা। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। পরে মেয়েটি বলে, এক আত্মীয় ওকে মেলায় ঘুরতে নিয়ে এসে অচেনা লোকের সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে চাইছিল। এতটুকু শুনেই সব বুঝে যাই, পুলিশে খবর দেই।’’ মেয়েটিকে ট্র্যাফিক পোস্টের সামনে বসিয়ে পুলিশে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন ওই পথচারী। ততক্ষণে আরও কয়েকজনকে ডেকে জড়ো করেন তিনি। অভিযোগ, মেয়েটিকে একা ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহজনক এক ব্যক্তি তার ওপর নজরদারিও চালাচ্ছি। এক পথচারীকে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সেই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে পুলিশ শিলিগুড়ি থানার চাইল্ড কর্নারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে শহরের একটি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেয়েটিকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের কয়েকজনের দাবি, পুলিশের সক্রিয়তাতেই অল্পের জন্য পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, সাহুডাঙি এলাকায় ছাত্রীর বাড়ি। বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের কাছে মেয়েটি দাবি করেছে তার মা দীর্ঘদিন ধরেই অনত্র্য থাকেন। এ দিন বাড়ির কাছের একটি এলাকায় এক আত্মীয়ের সঙ্গে ছাত্রীর দেখা হয়। সে-ই ছাত্রীকে সঙ্গে করে বর্ধমান রোডে মেলা দেখতে নিয়ে আসে বলে বলে দাবি। ছাত্রীর অভিযোগ, মেলা থেকে বের হওয়ার পথে এক অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে তাকে যেতে বলা হয়। যেতে না চাইলে ছাত্রীটিকে ওই অচেনা ব্যক্তি চড়ও কষিয়ে দেয়। তারপরেই ছাত্রীটি দৌড়ে হিলকার্ট রোডে চলে আসে। তারপরে আর বাড়ি ফেরার পথ চিনতে পারছিল না ছাত্রীটি। এ ঘটনার খবর পেয়ে থানায় গিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে পথচারী মেয়েটিকে দেখে এগিয়ে গিয়ে কথা বলে পুলিশকে খবর দিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ। এমন অনেক ঘটনা তো অনেকে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে যান। তারপরে পুলিশ যে ভাবে সক্রিয় হয়ে দ্রুততার সঙ্গে মেয়েটিকে উদ্ধার করে হোমা পাঠানোর ব্যবস্থা করে তাও ব্যতিক্রমী।’
শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার বলেন, ‘‘ছাত্রীর বয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের থেকে শুনে পদক্ষেপ করা হবে।’’
দার্জিলিং জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক মৃণাল ঘোষ বলেন, ‘‘যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কো অর্ডিনেটর শেখর সাহা বলেন, ‘‘আপাতত ছাত্রীটির মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy