চয়ন মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।
লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত বাবা। অসুস্থতার কারণে মায়ের দিনমজুরির কাজও নিয়মিত জোটে না। পরিবারের হাল ধরতে ফুলের মালা বিক্রি করতে হয়েছে চয়নকে। পাশাপাশি টিউশন পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচের সঙ্গে বোনের পড়াশোনার খরচও তুলতে হয়েছে তাঁকে।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ৯৪ শতাংশ পেয়ে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও পড়শিদের অবাক করে দিয়েছেন কালিয়াগঞ্জের তরঙ্গপুর নন্দকুমার হাইস্কুলের ছাত্র চয়ন মণ্ডল। ৪৭০ পেয়েও সেই খুশির রেশ ছুঁতে পারেনি চয়ন ও তাঁর পরিবারকে। স্নাতক স্তরের পড়াশোনার খরচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় অভাবী পরিবারের ওই মেধাবী কৃতি। কেউ ধারাবাহিকভাবে তাঁকে আর্থিক সাহায্য না করলে তাঁর ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা চয়নের। বুধবার স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে জেলাভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। সংসদ নিযুক্ত উত্তর দিনাজপুর জেলার উচ্চমাধ্যমিক পরিচালন কমিটির আহ্বায়ক ব্যোমকেশ বর্মন জানান, চয়ন এবছর উচ্চমাধ্যমিকে জেলার মধ্যে অষ্টম স্থান দখল করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে পড়াশোনার জন্য চয়ন আমার কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে, তা সংসদের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’
স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয়কুমার রায় জানান, চয়ন স্নাতক স্তরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁকে সাধ্যমতো আর্থিক সহযোগিতা করবেন। চয়নের যা মেধা তাতে তিনি কলকাতার কোনও ভাল কলেজে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে যাবেন বলে মত সঞ্জয়বাবুর। কলকাতায় পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে শিক্ষকের চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বিকল্প কর্মসংস্থানেরও অভাব হবে না বলে জানান তিনি। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থা চয়নের পাশে দাঁড়ালে তবেই কলকাতায় গিয়ে চয়নের পড়াশোনা করা সম্ভব হবে বলে জানান সঞ্জয়বাবু। চয়ন নিজেও এই কথাই বলেছেন।
পেশায় দিনমজুর চয়নের বাবা মন্টুবাবু প্রায় ছ’মাস আগে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সেই থেকে তিনি বাড়িতে শয্যাশায়ী। প্রতিবেশিদের আর্থিক সহযোগিতায় চয়নই নিয়মিত তাঁর বাবাকে কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করাচ্ছেন। ২০১৪ সালে ৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করলেও অর্থাভাবে বিজ্ঞান নিয়ে রায়গঞ্জের কোনও নামী স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারেননি চয়ন। ফলে শিক্ষকদের সহযোগিতায় কলাবিভাগ নিয়ে নিজের স্কুলেই উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy