Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টাকা বরাদ্দ হলেও মেলেনি স্কুলের পোশাক

মার্চ মাস শেষ হতে চললেও, কোচবিহারের বহু স্কুলেই এখনও স্কুলের পোশাক পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। পাঁচ মাস আগে সর্বশিক্ষা মিশন প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্মের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। চলতি মাসেই প্রকল্পের সমস্ত টাকা খরচের হিসেবের শংসাপত্র জমা দিতে হবে। না হলে টাকা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪৪
Share: Save:

মার্চ মাস শেষ হতে চললেও, কোচবিহারের বহু স্কুলেই এখনও স্কুলের পোশাক পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। পাঁচ মাস আগে সর্বশিক্ষা মিশন প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্মের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। চলতি মাসেই প্রকল্পের সমস্ত টাকা খরচের হিসেবের শংসাপত্র জমা দিতে হবে। না হলে টাকা ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় এবার মডেল প্রজেক্ট নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলের পোশাক বিলির কাজ শুরু হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমেই বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে স্কুলের পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয়।

এতদিন পর্যন্ত সরাসরি স্কুলগুলিকেই ওই দায়িত্ব দেওয়া হত। অভিযোগ উঠেছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরোধের জেরে ছাত্রছাত্রীরা ইউনিফর্ম পাচ্ছে না। ১৯৯টি স্কুল সমস্যা তৈরি করেছে বলে গোষ্ঠীগুলির তরফে গ্রামোন্নয়ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের তরফে জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানানো হয়েছে।

কোচবিহার জেলা গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক সঞ্জয় দাস বলেন, “ইতিমধ্যে দেড় হাজার স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলের পোশাক বিলির কাজ শেষ হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। কিছু স্কুল থেকে এখনও অর্ডার না পাওয়ায় ইউনিফর্ম বিলি করা যায়নি। এই কাজ মার্চ মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য স্কুল দফতরের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইউনিফর্ম বিলির জন্য যে মডেল প্রজেক্ট নিয়েছে তা সফল হয়েছে।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, সর্বশিক্ষা মিশন প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের জন্য ১৩ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ করেছে। একজন ছাত্র পিছু ৪০০ টাকা করে বরাদ্দ হয়। ওই টাকায় দু’টি করে স্কুলের পোশাক ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের এই পোশাক দেওয়া হয়।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে ওই টাকা তুলে দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্ম তৈরি করে দেন। এবারে কোচবিহারের পুরসভার মধ্যে যে ৮০ টি স্কুল রয়েছে, সেখানে সরাসরি কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরেই রাজ্য সরকারের নির্দেশে মডেল প্রজেক্টে গ্রামের স্কুলগুলির ক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে পোশাক সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়। গ্রামোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বরাত দেওয়া হয়। ২৩০০ টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইউনিফর্ম তৈরির বরাত পায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। অভিযোগ, বেশ কিছু স্কুলে মহিলারা গেলে তাঁদের সহযোগিতা করা হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বা ইউনিফর্ম তৈরির মাপ কোনওটাই নিতে দেওয়া হয়নি। তা নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়।

যদিও এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, গোষ্ঠীর সদস্যরাই কাজ করে উঠতে পারছে না। ঘুঘুমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কর বলেন, “কিছুদিন আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা একদিন এসেছিলেন। তাঁরা বরাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর আসেননি।” গৌরাঙ্গবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কান্তেশ্বর বর্মন বলেন, “গোষ্ঠীর সঙ্গে অসহযোগিতার কোনও ব্যাপার নেই। তাঁরা একবার এসে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন। অভিভাবকদের মধ্যে থেকে অনেকেই স্কুলের পোশাকের জন্য টাকা চেয়েছেন। তাঁদের যুক্তি টাকায় তিনটি ইউনিফর্ম তৈরি হলে মান খারাপ হবে। তবে সরকারি নির্দেশ মেনেই আমরা চলব।”

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সঙ্ঘের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সমস্যা কোথায় হচ্ছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। দ্রুত ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পোশাক পাক এটাই চাইছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE