প্রতীকী ছবি
দেড় মানুষ উঁচু পাট খেত। সেদিন সন্ধেয় দু’জন অচেনা লোককে নাকি খেতের ভিতর ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন ঠাকুরপাটের বাসিন্দা জয়ন্তী রায়। একটু ঘাবড়ে গিয়ে ‘কাল্লাকাটা পার্টি’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন বছর পঞ্চাশের জয়ন্তী। ব্যস, আর যায় কোথায়! পাশেই তখন ফুটবল ম্যাচ জেতার আনন্দে চলছিল পিকনিক। লাঠি-বাঁশ উঁচিয়ে গ্রামের ছেলে-ছোকরারা ঘিরে ফেলে গোটা পাট খেত। তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকে পাওয়া যায়নি সেদিন।
ধূপগুড়িতে ছেলেধরার গুজব কে বা কারা ছড়াচ্ছে, সেই উত্তর এখনও পায়নি পুলিশ। স্থানীয়রাও গুজবের উৎস জানেন না। তবে গুজবের হাত ধরে ফের নতুন করে গ্রামে আমদানি হয়েছে এই ‘কাল্লাকাটা’ কথাটির। বিগত আশি ও নব্বইয়ের দশকে গ্রামের মানুষ ‘কাল্লাকাটা’ নামটা শোনামাত্রই ভয়ে কুঁকড়ে যেতেন।
গ্রামের দিকে সেই সময় একটা গুজব চালু ছিল, পাকা সেতুর পিলার তৈরির আগে তার তলায় রাখা হয় শিশুদের কাটা মুণ্ড। এতে নাকি পিলার মজবুত হয়। আর গ্রামে ঢুকে যারা ওই মাথার খোঁজ করে তাদের বলা হত ‘কাল্লাকাটা’। তবে শিক্ষা ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কুসংস্কারের মত ‘কাল্লাকাটা’ গুজবও মানুষের মন থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল। তবে ছেলেধরার গুজব ছড়াতেই ফের ‘কাল্লাকাটা’ ঘিরে শুরু হয়েছে নানা গুজব।
রাজবংশী ভাষায় ‘কাল্লা’ শব্দের অর্থ মাথা। আর যারা মাথা কাটে তারাই হল ‘কাল্লাকাটা’! রাজবংশী ভাষার চিত্রপরিচালক ও সাহিত্যিক তপন রায় বলেন, ‘‘আসলে বর্ষাকাল এলেই নানা ধরনের গুজব ছড়ায় গ্রামে। এই সময় প্রায় সব এলাকাই উঁচু পাট খেতে ছেয়ে থাকে। অনেক সময় পাট খেতগুলিতে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম চলে। তাই সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকেন এলাকার লোকজন।’’ তবে তাঁর মতে, গুজব ছড়ানোর পিছনে গ্রামের বয়স্কদেরও একটা ভূমিকা থাকে। অনেকেই আড্ডায় এ ধরনের গল্পগাছা ও গুজব গল্পের মতো করে বলাবলি করেন। তার জেরে প্রভাব পড়ে শিশু ও কিশোরদের মনে।
তবে ‘কাল্লাকাটা’ ব্যাপারটি যে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে তার প্রমাণ মিলেছে ছেলেধরা সন্দেহে বারোঘড়িয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলার গণপিটুনির ঘটনাতেও। ওই মহিলাকেও মারধরের আগে তাঁকে ‘কাল্লাকাটা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি গ্রামবাসীদের একাংশের।
ধূপগুড়িতে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের এক সদস্য বিভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘আগেকার দিনে মানুষ নানা কুসংস্কারে বিশ্বাস করত। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক এগিয়ে। তাঁরা কেন এ সব বুজরুকিতে বিশ্বাস করবেন? সেতুর পিলার মজবুত করতে আজ ইঞ্জিনিয়াররা প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। কারও মুণ্ড নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy