Advertisement
০৮ মে ২০২৪

মৃতার অস্ত্রোপচার, বের হল মৃত সন্তান

পরিকাঠামো ছাড়াই কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণ করানোয় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ৷ আরও অভিযোগ, প্রসূতির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর অস্ত্রপচার করে মৃত সন্তান প্রসব করানোর৷ এই দুই ঘটনার জেরে রীতিমতো বিপাকে জলপাইগুড়ি শহরের একটি নামী নার্সিংহোম৷

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

পরিকাঠামো ছাড়াই কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণ করানোয় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ৷ আরও অভিযোগ, প্রসূতির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর অস্ত্রপচার করে মৃত সন্তান প্রসব করানোর৷ এই দুই ঘটনার জেরে রীতিমতো বিপাকে জলপাইগুড়ি শহরের একটি নামী নার্সিংহোম৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতর রীতিমতো চার জনের একটি কমিটি গঠন করে নার্সিহোমের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে৷ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা পুলিশও৷ যদিও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন৷

নার্সিংহোম সূত্রে জানা গেছে, মৃত মহিলার নাম চন্দ্রাণী সাহা (২৭)৷ তাঁর বাড়ি গয়েরকাটার তেলিপাড়ায়৷ ওই গৃহবধূর স্বামী রাজেশ সাহার অভিযোগ, “স্ত্রীর সন্তান ধারণ নিয়ে সমস্যার জন্যই বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পর জলপাইগুড়ির ওই নার্সিংহোমে গিয়েছিলাম৷ সেখানকার চিকিৎসক জানান, টেস্ট টিউবের মাধ্যমে আমার স্ত্রী সন্তান ধারণ করতে পারবেন৷ সেই অনুযায়ী স্ত্রীর চিকিৎসাও শুরু হয়৷ কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই আমার স্ত্রী প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন৷ চিকিৎসককে বললেও বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দেননি৷ উল্টে ‘সিজার’ করে সন্তান প্রসব করানোর জন্য সোমবার নার্সিহোমে ভর্তি করাতে বলেন৷ সেই মতো ভর্তিও করাই৷ কিন্তু খানিকক্ষণের মধ্যেও স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে৷ শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রীকে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক৷ কিন্তু শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷”

ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়৷ জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরে মৃতার পরিজনরা দেহ ফের জলপাইগুড়ির ওই নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন৷ এবং মৃতার দেহে থাকা সন্তানটি প্রসব করানোর জন্য চাপ দেন৷ তার পর সেই নার্সিংহোমেই অস্ত্রোপচার করে মৃতার দেহ থেকে তার মৃত সন্তানটিও বের করা হয় বলে অভিযোগ৷ মৃতার মামি মুক্তি দাস বলেন, “এটা ঘটনা যে আমরাই রাগারাগি করেছিলাম৷ আর সে জন্যই যে চিকিৎসক আমার ভাগ্নির চিকিৎসা করছিলেন, তিনিই অস্ত্রোপচার করে মৃত সন্তানটিকে বের করে দিলেন৷”

এ দিকে ঘটনাটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও, সূত্র মারফত খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর৷ সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধার সাফ কথা, জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও নার্সিংহোমেই কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণ করানোর পরিকাঠামো নেই৷ সে জন্য এ ধরনের গর্ভধারণ করানোর অনুমতিও নার্সিংহোমগুলিকে দেওয়া হয়নি৷ তার পরেও এমন অভিযোগ কেন উঠল, সে জন্যই চার সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আমরা৷

পাশাপাশি জেলা পুলিশও গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে৷ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে এক প্রসূতির মৃত্যু হল৷ অথচ তার কয়েক ঘণ্টা বাদে জলপাইগুড়ির একটি নার্সিংহোমে সেই প্রসূতির পেটে অস্ত্রোপচার করে সন্তান বের করা হল৷ কেন এমন ঘটনা হল, সেটাই আমরা তদন্ত করে দেখছি৷”

নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য গোটা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ, সেই প্রদীপকুমার বর্মা বলেন, “সন্তানহীনতার জন্য বছর দেড়েক ধরে ওই মহিলা চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তবে টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে নয়, বরং আইইউআই বা ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন পদ্ধতিতেই আমি তার চিকিৎসা করছিলেন৷ কিন্তু আচমকা শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি তাঁকে শিলিগুড়িতে রেফার করি৷ সেখানে মহিলার মৃত্যু হয় ৷” ওই চিকিৎসকের সাফ কথা, “মৃত্যুর পর ওই মহিলার দেহে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসবের ঘটনা আমি তো করিইনি, আমার নার্সিংহোমেও হয়নি৷”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nursing home preagnant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE