Advertisement
E-Paper

বাগান ফিরেছে নগদেই

গত নভেম্বরে নোটবন্দির জেরে নকশালবাড়ির প্রত্যন্ত এলাকার চা বাগানের শ্রমিক বুধিয়াদের মজুরি বিলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে বাগানই বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের খরচ তুলতে গোয়ালের গরু ‘মুংলি’কে মাটিগাড়া হাটে বেচে দিতে হয়েছিল তাঁকে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৪
প্রচার: নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ব্যানার তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র

প্রচার: নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ব্যানার তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র

‘নোটবন্দি’র কথা পাড়তেই ‘মুংলি, মেরি মুংলিরে’ বলে কান্না জুড়ে দেন বুধিয়া ওঁরাও। গত নভেম্বরে নোটবন্দির জেরে নকশালবাড়ির প্রত্যন্ত এলাকার চা বাগানের শ্রমিক বুধিয়াদের মজুরি বিলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে বাগানই বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের খরচ তুলতে গোয়ালের গরু ‘মুংলি’কে মাটিগাড়া হাটে বেচে দিতে হয়েছিল তাঁকে।

মাঞ্ঝা বাগানের কল্পনা কুল্লু, মাতিলদা তিরকের মতো চা শ্রমিকরা আবার এখন ব্যাঙ্ক, এটিএমের নাম শুনলেই পালাতে চান। ওঁদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টে ৬-৭ লক্ষ টাকার লেনদেন করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের তরফে চিঠি পাওয়ার পরে ওঁরা প্রথমে মাথায় হাত দিয়েছিলেন। গড়পরতায় রোজ ১৩২ টাকার হাজিরা পাওয়া মাতিলদারা কোনও দিন ভাবতেও পারেননি, অ্যাকাউন্টে লাখ টাকা জমবে। তাই পঞ্চায়েতকে ধরাধরি করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন।

কিন্তু, আজও সেই মামলা চলছে। কে লেনদেন করেছিল বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও তথ্যই সামনে আসেনি। পুলিশ, ব্যাঙ্ক— সবাই ‘বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য নয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই মাতিলদা, কল্পনারা বলেন, ‘‘মালিকের কাছে হাত জোড় করে বলেছি, ব্যাঙ্ক-এটিএম নয়, সাপ্তাহিক মজুরি হাতেই দিতে হবে।’’

সব মিলিয়ে এক বছর পেরোলেও নোটবন্দির ধাক্কা যেন এখনও টাটকা শিলিগুড়ি-সহ তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে। তরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টিপা) নথি অনুযায়ী, ৩০টি চা বাগানের শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ২৫ হাজার। ফি সপ্তাহে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ দিতে হয় ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। নোটবন্দির পরে নগদ লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ায় বেশির ভাগ বাগানে মজুরি বকেয়া পড়ে যায়। ৬টি বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি। বাকিগুলিতে মজুরি ঠিকমতো মিলছিল না। ফলে, শ্রমিকদের জমানো টাকা, ছোটখাট গয়না বিক্রি করে দিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি শ্রমিককে অ্যাকাউন্ট করে এটিএমে টাকা তোলানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও তা করতে পারেননি সব বাগান কর্তৃপক্ষ। কারণ, ৪টি বাগানে ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। ৫টি বাগানে এটিএম রয়েছে। বাকিগুলির থেকে ব্যাঙ্ক-এটিএমের দূরত্ব কোথাও কোথাও ২০ কিলোমিটার অবধি। যাতায়াতের জন্য গাড়িও অনিয়মিত। ফলে, টাকা তুলতে একটা দিন নষ্ট। মার যাবে মজুরিও। তাই গোড়ায় কিছু দিন ব্যাঙ্ক মারফত মজুরি বিলি হলেও এখন শ্রমিকদের চাপে ফের নগদের ঘরানায় ফিরেছে তরাইয়ের বেশির ভাগ বাগান।

সিটু অনুমোদিত দার্জিলিং জেলা চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের সকলের পক্ষে ডিজিটাল লেনদেন রপ্ত করা চাট্টিখানি ব্যাপার! নোটবন্দির পরে ওঁদের অনেকেই মজুরি না পেয়ে ধারদেনায় ডুবছিলেন। তার উপরে ব্যাঙ্ক-এটিএমে একযোগে বাগানের ৫-৬শো শ্রমিক গেলে সকলে টাকাও পায় না। সে জন্য নগদের দাবি জানিয়েছিলাম।’’

তাই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ থেকে মুখ ফেরানো ছাড়া উপায় ছিল না, মানছেন টিপার সদস্যদের অনেকেই। টিপার উপদেষ্টা উদয়ভানু দাস বলেন, ‘‘সব বাগানে ব্যাঙ্ক, পর্যাপ্ত এটিএম খোলার আর্জি জানিয়েছি। সেটা হলে তবু শ্রমিকদের বোঝাতে পারব।’’ তত দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

Demonetisation Impact
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy