Advertisement
০৩ মে ২০২৪
হাই মাদ্রাসায় সেরা নাজরিন

মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পুরস্কার চান বাবা

সুখবরটা এখনও কানে পৌঁছয়নি। হস্টেল থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যেই ঘরে ফিরবে মেয়ে। তখনই ‘সারপ্রাইজ’ দিয়ে একেবারে চমকে দেওয়ার অপেক্ষায় বাবা-মা সহ গোটা পরিবার। শুধু তো পড়াশোনা নয়, নিজের অধ্যবসায়ের উপরে অটল বিশ্বাসে একেবারে মাদ্রাসা বোর্ডের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেরার খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে একরত্তি মেয়ে।

রায় শোনার পরে পরিবারের সকলকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন নাজরিনের মা। — নিজস্ব চিত্র

রায় শোনার পরে পরিবারের সকলকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন নাজরিনের মা। — নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৮
Share: Save:

সুখবরটা এখনও কানে পৌঁছয়নি। হস্টেল থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যেই ঘরে ফিরবে মেয়ে। তখনই ‘সারপ্রাইজ’ দিয়ে একেবারে চমকে দেওয়ার অপেক্ষায় বাবা-মা সহ গোটা পরিবার। শুধু তো পড়াশোনা নয়, নিজের অধ্যবসায়ের উপরে অটল বিশ্বাসে একেবারে মাদ্রাসা বোর্ডের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেরার খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে একরত্তি মেয়ে। আদালতের রায়ে ২০১৫ সালের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় সেরা শেখ নাজরিনের খুশিতে সুজাপুরে শুক্রবার শুধুই উৎসবের আনন্দ।

কলকাতার গিয়াসউদ্দিন দিলখুস (জিডি) অ্যাকাডেমির দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে নাজরিন। কিন্তু হস্টেলের নিয়ম বড় বালাই। সেখানে বৃহস্পতিবার দিন ছাড়া বাড়ির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায় না। ফলে এই মুহূর্তে এই জয়ের খবর সে পাচ্ছে না বটে, তবে এই সুযোগটাকেই চমকে বদলাতে চান বাবা-মা। জামিরঘাটা গন্ধর্ব মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক নাজরিনের বাবা শেখ আহমাদুল্লা জানান, ‘‘আগামী ২৪ তারিখ সে বাড়ি ফিরবে। সে দিনই তাকে ফল জানিয়ে উৎসব হবে। মেয়ে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় আমরা করাব।’’ তিনি আরও চান, ২০১৫ সালের হাই মাদ্রাসার সেরা দশ জনকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী সম্মানিত করেছিলেন, তাঁর মেয়েকেও যেন এর পর সে ভাবেই সম্মান জানানো হয়। তবে রায়ের খবর জানতে পেরে এ দিন ইতিমধ্যেই বাড়িতে, পাড়ায় একপ্রস্ত মিষ্টিমুখ করিয়ে ফেলেছেন পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নাজরিনের মা নাজিরা খাতুন।

কালিয়াচকের সুজাপুরে চাষপাড়া মসজিদের কাছেই বাড়ি নাজরিনদের। তার বোন শেখ ফারহানা অষ্টম শ্রেণি ও ভাই শেখ তাহির ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। নাজরিনের দাদু মহম্মদ আলি হোসেন একটি হাই মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ফলে বাড়িতেই শিক্ষার পরিবেশ রয়েছেই। দাদু জানালেন, ছোট থেকে তার লেখাপড়ার দেখভাল তিনিই করছেন। সুজাপুর নয়মৌজা হাই মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি থেকেই সে প্রথম স্থান পেয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘‘ফলে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ও যে সেরাদের মধ্যে থাকবে তার আশা আমাদের ছিল। কিন্তু পরীক্ষার খাতা রি-চেকের নামে যা কাণ্ড করা হয়েছে তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রকৃত সম্মান ফিরিয়ে আনতে হল।’’

মা নাজিরা বলেন, ‘‘মেয়ে লেখাপড়া ছাড়া কিছুই বোঝে না। বাড়িতে প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা পড়ত। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি প্রচুর রেফারেন্স বইও পড়ত। আমরা চাই মেয়ে উচ্চশিক্ষিত হয়ে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করুক।’’ এর পরে সে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চায়, জানান তিনি। তাঁদের স্বপ্ন মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়ে এসে এলাকার মানুষকেই সেবা করার সুযোগ পায়।

নয়মৌজা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন বলেন, ‘‘নাজরিন মাদ্রাসার গর্ব। সে বরাবরই প্রথম হয়ে এসেছে। আমরাও আশা করেছিলাম ও রাজ্যের মেধা তালিকায় সেরাদের মধ্যেই থাকবে। তা না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। এখন ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CM Reward Seikh Najrin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE