Advertisement
০৯ মে ২০২৪

রবীন্দ্রনাথ ছাড়া শখ ছিল শুধু রান্না আর পড়ানো

বাড়ি থেকে স্কুলের গেটের দূরত্ব মেরেকেটে ২০০ মিটার। ছোটবেলা সেই স্কুল থেকে ফিরে মাঝেমধ্যেই বলতেন, ওই স্কুলেই শিক্ষিকা হব। মেয়েদের পড়াব। আরেকটু বড় হতেই বলতেন, সমাজ সম্পর্কে মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত রাখা দরকার। শুধু পড়ানো নয়, নিজের পায়ে যাতে মেয়েরা দাঁড়াতে পারে, সেই শিক্ষা দিতে হবে।

মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে প়ড়লেন মা। ছবি:বিশ্বরূপ বসাক

মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে প়ড়লেন মা। ছবি:বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

বাড়ি থেকে স্কুলের গেটের দূরত্ব মেরেকেটে ২০০ মিটার। ছোটবেলা সেই স্কুল থেকে ফিরে মাঝেমধ্যেই বলতেন, ওই স্কুলেই শিক্ষিকা হব। মেয়েদের পড়াব। আরেকটু বড় হতেই বলতেন, সমাজ সম্পর্কে মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত রাখা দরকার। শুধু পড়ানো নয়, নিজের পায়ে যাতে মেয়েরা দাঁড়াতে পারে, সেই শিক্ষা দিতে হবে। তাই চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি। শক্তিগড় বালিকা বিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য শিলিগুড়ি গার্লস স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে তিন তিনবার এসএসসি পরীক্ষায় সফল হয়ে দুই জেলা ঘুরে পাড়ার স্কুলের ভূগোল শিক্ষিকা হন রীতা সরকার। এর জন্য পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে গর্বও করতেন। খুব একটা মিশুকে স্বভাবের না হলেও পাড়ার ভাল, উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে হিসাবে সুনামও ছিল। সম্প্রতি নেট পরীক্ষায় সফলও হয়েছিলেন।

রবিবার বিকালে পাড়ার মেয়ে রীতার সাদা চাদরে মোড়া দেহ শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের মাঠের পাশে বাড়িতে আসতেই কান্নায় ভেঙে বহু মহিলা। বাড়ি থেকে বার হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। রীতিমতো কয়েকশো বাসিন্দার ভিড়ে রাস্তায় হাঁটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। আর যাতে কোনও মেয়ের সঙ্গে এমনটা না হয়, তা জানিয়ে সরব হন অনেকেই। তাঁদেরই কয়েকজন বলেন, ‘‘মেয়েদের নিজের পায়ের দাঁড়ানোর কথা বলত রীতা। তাঁর সঙ্গেই এমন হল ভাবাই যায় না। রীতা মেয়েদের সত্যিই শিক্ষা দিয়ে গেল। কেউ সমস্যা করলে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিজের জীবন দিয়ে এ ভাবে প্রতিবাদ নয়, বেঁচে থেকে দোষীদের গারদে পাঠাতে হবে।’’

পুলিশ জানায়, চোপড়া, মোহিতনগরের দুটি স্কুলে এর আগে পড়িয়েছেন রীতা। স্কুল, পড়াশোনা, রবীন্দ্রনাথ আর রান্নার শখ নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন। বিয়ে, প্রেম নিয়েও কোনওদিন ভাবেননি-সুসাইড নোটেও তা লিখে গিয়েছেন। কবিতা এবং রান্নার রেসিপি ঠাসা দুটি ডায়েরিও উদ্ধার করেছে। মৃতার পাড়ার কয়েকজন বয়স্ক মহিলা জানান, মাথা নিচু করে স্কুলে যেত। আর দশজনের মতো আড্ডা, ঘোরাঘুরি করতে দেখাই যেত না। তাই স্থানীয় কাউন্সিলর দীপা বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেয়েটাকে রাস্তাঘাটে দেখাই যেত না। আমরা পুলিশের কাছে যাব, দোষীরা যেই হোক ছাড়া যাতে না পায়।’’

টিনের বাড়ির তিন কামরার ছোট্ট ঘরে মা-মেয়ের সংসার। বই, ডায়েরি আর পুতুলে ঠাসা আলমারি। দাদা বিক্রম সরকার বলেন, ‘‘এ বাড়ির সব কিছু ও দেখত। ছোট থেকে খুব আত্মসম্মান বোধ ছিল।’’ স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না সিংহ জানান, মাঝে স্পোর্টস হল। মাইকিং করা, প্রাইজ দেওয়া সব করল। দু’দিন ছুটি নিয়েছিল। তারপরে ভাবতেই পারছি না, কী হল!’’ পাড়ার সকলেরও একই বক্তব্য। কী থেকে কী হল, কেউই ভাবতে পারছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Suicide Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE