Advertisement
০৮ মে ২০২৪
বন দফতরকেও এগিয়ে আসার ডাক দিচ্ছেন আবাসিক, শিক্ষক সকলেই

অন্তত ১০০ প্রজাতির পাখি আছে ক্যাম্পাসে

পুকুর এবং নদীর আশপাশ গাছগাছালিতে ভরা ও সঙ্গে রয়েছে ঝোপজঙ্গল ঘাসজমি। সেখানে হলদে-মাথা খঞ্জনা, ডাহুক, পানকৌড়ি, ক্যাটল ইগার্ট, লিটল ইগার্ট কিংবা ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন-এর মতো নানা প্রজাতির বক মনের সুখে ঘুরে বেড়ায়।

অনিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৭
Share: Save:

পুকুর এবং নদীর আশপাশ গাছগাছালিতে ভরা ও সঙ্গে রয়েছে ঝোপজঙ্গল ঘাসজমি। সেখানে হলদে-মাথা খঞ্জনা, ডাহুক, পানকৌড়ি, ক্যাটল ইগার্ট, লিটল ইগার্ট কিংবা ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন-এর মতো নানা প্রজাতির বক মনের সুখে ঘুরে বেড়ায়। নদী, জলাশয়ের ধারে বা ঘাসজমিতে সাপ, ব্যাং, উই বা ছোট পোকামাকড়েরা থাকে। থাকে ছোট ছোট মাছ, জলজ প্রাণী ও লতাগুল্ম। এই সব খাবারের লোভেই ওরা এখানে আসে, আস্তানা গাড়ে। অনেক সময় নদী থেকে মাছ তুলে নিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায় চিলকেও। জানালেন জেতা সাংকৃত্যায়ন।

বিদ্যাসাগর মঞ্চের পিছনে বিরাট শালের জঙ্গল। কানে আসে চেনা-অচেনা পাখির সুরেলা সিম্ফনি। হঠাৎ দেখা দিয়ে যায় পাহাড়ি সোনালিরঙা কাঠঠোকরা, কমলা-বুক হরিয়াল, ধূসর-পীত অঞ্জনা। গাছের নীচে মাটিতে শালিখের লাগাতার কিচির-মিচির। কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজের স্নাতকোত্তর প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান দীপঙ্কর সেনগুপ্তর মতে—এই ক্যাম্পাসের বাস্তুতন্ত্র পাখির বসবাসে সহায়ক। এখানে খাদ্য, বাসস্থান ও নিরাপত্তা রয়েছে বলেই এত পাখি আসছে।’’

আধিকারিক বা অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া সবারই অভিজ্ঞতা—‘‘আমাদের সকালই হয় পাখির ডাকে!’’ অনেকে জানান, রাত নিঝুম হলে মাঝেসাঝেই পেঁচার ডাক শোনা যায়। ঘরের বারান্দা থেকে হামেশাই নজর কেড়ে নেয় একজোড়া ধনেশ পাখি। শীত গ্রীষ্ম যে-কোনও সময়েই দৈনন্দিন ক্লাসের ফাঁকে প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটান তাঁরা। চেনা-অচেনা বিচিত্র পাখির ডাক শুনতে পাই। ‘‘ব্যস্ত শরীর ও মনকে এ থেকে রসদ দিয়েনি কিছু ক্ষণের জন্য’’—বললেন অধ্যাপক নিখিলেশ রায়।

অধ্যাপক যশ জানান, ‘‘গেস্ট হাউসের পিছনে কদম জারুল ডুমুরের ছায়াঢাকা পথ। সেখানে দিনের বেলায় গাছের ঠিক নীচে মাটিতে মাঝে-মধ্যেই পেঁচা দেখেছি।’’

ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে শাল কদম চন্দন জারুল বয়রা ডুমুর বা কালো শিরীষের উজার করা সবুজ। ফল খেতে আসে চন্দনা তোতা কোকিল কমলা-বুক হরিয়াল, টুনটুনি কালো বুলবুলি বা সিপাই-বুলবুলির দল।

তবে শুধুই কি পাখি দেখা আর চিনে নেওয়া? ক্যাম্পাসের এই পাখি নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে আস্ত একটা বই। মূল লেখক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ মুখোপাধ্যায়। এতে ছবি-সহ মলাটবন্দি করা হয়েছে একশোরও বেশি ধরনের পাখির প্রজাতি, তাদের খাদ্যাভ্যাস, ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান, শারীরিক গঠন ও গায়ের রঙের নিঁখুত বর্ণনা। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ক্যাম্পাসে পাখি নিয়ে সমীক্ষা করে তবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এই গ্রন্থে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সমীক্ষার তথ্য থেকে বোঝা যাবে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও পরিবেশ কতটা সুরক্ষিত থাকছে।’’ অনির্বাণ মিশ্র জানালেন, ‘‘পড়ুয়া থেকে নিরাপত্তারক্ষী সকলেই এখানে ক্যাম্পাসের পাখি নিয়ে সচেতন। বন দফতর যদি এ-ব্যাপারে এখন এগিয়ে আসে, তা হলে আরও ভাল হয়।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষিবিদ্যার অধ্যাপক সুজিত মণ্ডল জানান, মাত্র ৩ দিন সমীক্ষা করেই মিলেছে বিভিন্ন ধরনের ১০০টি প্রজাতির পাখির সন্ধান। যার মধ্যে রয়েছে সারা বছরই বাসা বেঁধে ক্যাম্পাসে থাকে এমন পাখি—এবং আসা-যাওয়া করে এমন পরিযায়ী পাখির দল।’’ তিনি আশা করেন, বছরের বিভিন্ন সময়ে সমীক্ষা চালালে নানা ধরনের ৩০০রও বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে। তাঁর মতে, ক্যাম্পাসে নতুন ভবনগুলি আনুভূমিক নয়, উল্লম্ব হওয়া প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bird 100 species
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE