Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ক্ষণিকের ঝড়ে বিপত্তি

মেখলিগঞ্জ বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক সমীক্ষায় ৬৪টি বাড়ি আংশিক ও ১৯টি পুরো বাড়ি ভেঙে যায়। কয়েকটি জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা পুলিশ ও বন দফতরের সহযোগিতায় কেটে ফেলি। কোনও প্রাণহানি নেই।’’ 

আঁধার: সাত সকালেই এমন অবস্থা কোচবিহার স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

আঁধার: সাত সকালেই এমন অবস্থা কোচবিহার স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

কয়েক মিনিটের ঝড়। বুধবার সকালে এর দাপটেই লন্ডভন্ড হয়ে গেল উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বাজ পড়ে। মাঠের ফসল এবং আম-কাঁঠালের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। হাজারেরও বেশি কাঁচা বাড়ি ঝড়ের দাপটে ধ্বংস হয়েছে। প্রশাসন এখনও হিসেব দিতে না পালেও সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা।

দুই জেলায় মৃত চার

এদিন সকাল তখন প্রায় পৌনে ৮টা। প্রবল বেগে ঝড় আছড়ে পড়ে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। কুমারগ্রাম ব্লকের লস্করপাড়া এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মৃতদের নাম বিনোদ ওরাওঁ (৪৫) ও নির্মল দাস(৫৮)। দু’জনেই লস্করপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় কৃষক। এদিন সকালে গরু মাঠে দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। পাশাপাশি, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আলিপুরদুয়ার জেলার আধিকারিক রিচার্ড লেপচা জানান, ঝড়ে কুমারগ্রামের এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানা যায়নি। ঝড়ের জেরে আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দিনভর বিদুৎবিহীন হয়ে পড়ে। ঝড়ের দাপটে বহু ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়। ধসে যায় মাটির বাড়ির। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাতশো থেকে আটশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে ঝড়ে ধান, ভুট্টা-সহ একাধিক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার দীপঙ্কর সাহা জানান, ঝড়ে এখানকার বহু এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। বহু জায়াগায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবজিৎ সরকার জানান, মাঝেরডাবরি থেকে ভাটিবাড়ি, চালনিরপাক, চণ্ডীর ঝাড় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ দিন মাথাভাঙার গোপালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মহেশ বর্মন (৩৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। গরু নিয়ে মাঠে গিয়ে ঝড়ের মুখে পড়েন ওই যুবক। তবে কীভাবে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেন তা বিশদে জানা যায়নি। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের চ্যাংড়াবান্ধা, ভোটবাড়ি, জামালদহ, উছলপুকুরি অঞ্চলে ঝড়ের প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। মেখলিগঞ্জ বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক সমীক্ষায় ৬৪টি বাড়ি আংশিক ও ১৯টি পুরো বাড়ি ভেঙে যায়। কয়েকটি জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা পুলিশ ও বন দফতরের সহযোগিতায় কেটে ফেলি। কোনও প্রাণহানি নেই।’’

ঝড়ের মতো দৌড় নেতাদের

এদিন রাজনৈতিক নেতাদের অন্য রূপ দেখল মেখলিগঞ্জবাসী। বৃষ্টি কমতেই ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি ছুটলেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। ভোটারদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না কেউই। তৃণমূল ব্লক কমিটির কোর আহ্বায়ক লক্ষ্মীকান্ত সরকারকে দেখা গেলো চ্যাংড়াবান্ধা দেবী কলোনিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘হঠাৎ ঝড়ে মানুষ বিপন্ন। তাঁদের আশ্বস্ত করতে ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলছি।’’ বিজেপির মেখলিগঞ্জ দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি দধিরাম রায়কে দেখা গেল ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গিয়েছেন ভোটবাড়ি ও নিজতরফে। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার। এখানে রাজনীতির কিছু নেই।’’ অন্যদিকে, চ্যাংড়াবান্ধা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির নেতা হায়ারুদ্দিন মহম্মদ আবার চ্যাংড়াবান্ধা অঞ্চলের খেতাবেচা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। ফব ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজীব রায় পানিশালায় ঝড়ে আহতদের ওষুধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। কংগ্রেস নেতা মৃত্যুঞ্জয় সিংহ সরকার ও অনিল রায় আবার চ্যাংড়াবান্ধা-মেখলিগঞ্জ রাজ্য সড়কের উপর পড়ে থাকা গাছ সরাতে হাত লাগাচ্ছেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে।

ঝড়ে গাছ উধাও

ঝড়ে আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের চাপড়েরপাড় ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়চৌকি এলাকায় অন্তত ২০০টি কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। নূরপুর, চেপানি, টোটোপাড়া গ্রামে অন্তত ৪০০ আম-কাঁঠাল গাছ পড়ে যায়। গাছ পড়ে একশোরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুমারগ্রাম ব্লকের ভল্কা ১ ও গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ৪০০টি গাছ ভেঙে পড়েছে এবং ২০০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার উপর গাছ পড়ায় বারবিশা কুমারগ্রাম এবং ভাটিবাড়ি আলিপুরদুয়ার যান চলাচল ব্যাহত হয়। অভিযোগ উঠেছে, বাসিন্দাদের একাংশ রাস্তার উপর ভেঙে পড়া সরকারি গাছগুলি যে যার মত কেটে নিয়ে পালিয়ে যান। ভাটিবাড়ি-আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কের দুই পাশের ভেঙে না পড়া অন্তত দশটি গাছ এই সুযোগে কয়েকজন কেটেও নিয়ে যায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

চারঘণ্টা রাস্তা বন্ধ

কোচবিহারের দিনহাটার পুটিমারি সংলগ্ন এলাকায় বাড়িঘর, ফল ও চাষের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ক্ষতি হয়েছে মাথাভাঙার নয়ারহাটেও। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা কৃষি দফতরকেও ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির হিসেব হচ্ছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের আধিকারিকরা গিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” দিনহাটার ১ নম্বর ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মাষানকুড়া এলাকায় কোচবিহার-দিনহাটা সড়কে একটি বড় পাকুর গাছ উপড়ে পড়ে। ফলে প্রায় চার ঘন্টা ওই রুটে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thunderstorm Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE