Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বহিষ্কৃতদের’ সমর্থনেই বোর্ড গড়ল তৃণমূল

ভোটের আগে দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নির্দল সদস্যকে নিয়েই কোচবিহারে পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল। শুক্রবার পুরসভার বোর্ড গঠন হয়। পুরসভার চেয়ারপার্সন করা হয় প্রয়াত বীরেন কুণ্ডুর স্ত্রী রেবাদেবীকে। ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় আমিনা আহমেদকে।

বিদায়ী পুরপ্রধান দায়িত্ব দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিচ্ছেন নতুন পুরপ্রধান রেবা কুণ্ডু। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিদায়ী পুরপ্রধান দায়িত্ব দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিচ্ছেন নতুন পুরপ্রধান রেবা কুণ্ডু। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

ভোটের আগে দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নির্দল সদস্যকে নিয়েই কোচবিহারে পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল। শুক্রবার পুরসভার বোর্ড গঠন হয়। পুরসভার চেয়ারপার্সন করা হয় প্রয়াত বীরেন কুণ্ডুর স্ত্রী রেবাদেবীকে। ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় আমিনা আহমেদকে।

কুড়ি আসনের পুরসভায় তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ১০টি আসন। বামেরা পায় ৮টি। ২ টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হন। ক্ষমতা দখল করতে গেলে তৃণমূলের অন্তত আরও ১টি আসনের প্রয়োজন ছিল। বামেরাও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। তবে বোর্ড গঠনের সময় দুই নির্দল সদস্য তৃণমূলের পক্ষেই থাকেন। অবস্থা বুঝে হল ঘর থেকে বেরিয়ে যান বামেরা। এ দিন ওই নির্দল কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই ওই দুই নির্দল কাউন্সিলরকে দলে নেওয়া হয়েছে। আগে কী হয়েছে সেটা কথা নয়। আগামীতে কীভাবে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যায় সে চেষ্টা করা হবে।’’

পুরসভার ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। জেলা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে জেলার সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের গোষ্ঠীর বিরোধ তীব্র হয়। প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলা কোর কমিটি কয়েক দফায় আলোচনায় বসেও ফয়সালা হয়নি। পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় কোচবিহারের জেলা নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানে পুরসভার ১৪ নম্বর এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঘোষের তালিকায় থাকা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গৌতম বড়ুয়া ও ১৫ নম্বর থেকে শম্পাদেবীর নাম কেটে দেন রাজ্য নেতৃত্ব। ওই দুইজন অবশ্য প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন। শেষপর্জন্ত তাঁরা নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ান। পার্থবাবু কোচবিহারে কর্মিসভায় এসে ওই দু’জনকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।

ভোটের পরে অবশ্য দেখা যায় নির্দল কাউন্সিলরই জয়ী হয়েছেন। পরে তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থনের শর্তে ভাইস চেয়ারম্যানের দাবি করে বসে। তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের দাবিতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তেই তাঁদের সমর্থন করেন ওই দুই কাউন্সিলর। এ দিন রেবাদেবী চেয়ারম্যান এবং আমিনা আহমেদকে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর উল্লাসে মাতেন তৃণমূল সমর্থকরা। আমিনা আহমেদ গত বোর্ডেও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। দুই নির্দল কাউন্সিলর গৌতম বড়ুয়া এবং শম্পা রায় জানিয়েছেন, মানুষের দাবি মেনে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে গিয়েছেন। শম্পাদেবী বলেন, “যাঁদের ভোটে আমি জয়ী হয়েছি তাঁদের চাওয়া মতোই শাসক দলকে সমর্থন করেছি। এলাকার উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য।” গৌতমবাবু অবশ্য এ দিন অবশ্য কিছু বলতে চাননি।

বামেরা অবশ্য এ দিনের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের বিরোধিতা করেই মানুষ ওই দুই নির্দলকে জয়ী করেছিলেন। তাই তাঁদের তৃণমূলকে সমর্থন করা ঠিক হয়নি।’’ সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কাউন্সিলর মহানন্দ সাহা বলেন, “আরেকটা অন্ধকারময় যুগের শুরু হল। অনৈতিক ভাবে ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। বোর্ড গঠনেও তাঁদের ভূমিকা এক। এ বারে দুর্নীতি, সন্ত্রাস আরও ব্যাপক আকার নেবে বলে আমরা মনে করছি। আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE