Advertisement
১৭ মে ২০২৪

‘অন্তর্ঘাতে’র জবাব বিপ্লবকে

দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র অনুগামীদের ডানা ছাঁটা শুরু হল। বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে বিধানসভা ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার ডিপিএসসির (জেলা প্রাথমিক স্কুলসংসদ) চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডুকে সরিয়ে দেওয়া হল। কল্যাণবাবু জেলার রাজনীতিতে বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। পাশাপাশি শঙ্কর চক্রবর্তীকে সামনে রেখে এই জেলায় তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়াও শুরু হল। শঙ্করবাবুকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে।

(বাঁ দিকে) বিপ্লব মিত্র, (ডান দিকে) শঙ্কর চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিকে) বিপ্লব মিত্র, (ডান দিকে) শঙ্কর চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র অনুগামীদের ডানা ছাঁটা শুরু হল। বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে বিধানসভা ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছিল।

সোমবার ডিপিএসসির (জেলা প্রাথমিক স্কুলসংসদ) চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডুকে সরিয়ে দেওয়া হল। কল্যাণবাবু জেলার রাজনীতিতে বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। পাশাপাশি শঙ্কর চক্রবর্তীকে সামনে রেখে এই জেলায় তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়াও শুরু হল। শঙ্করবাবুকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে একজন পূর্ণমন্ত্রী ক্ষমতাতেই শঙ্করবাবুকে বসানো হল বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ রাজ্যের বিশেষ সচিব এ কে ভট্টাচার্যের তরফে বালুরঘাটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডুকে চিঠি পাওয়া মাত্র ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ কল্যাণবাবু চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ডিপিএসসি থেকে বেরিয়ে যান। কল্যাণবাবু ইস্তফা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। জেলা স্কুল পরিদর্শককে আপাতত ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসন শাসক দলের হাতছাড়া হয়ে যায়। বালুরঘাটের বিদায়ী বিধায়ক তথা মন্ত্রী শঙ্করবাবু, গঙ্গারামপুরের প্রার্থী সত্যেন রায় এবং কুশমণ্ডির প্রার্থী রেখা রায়কে হারাতে বিপ্লব অনুগামীরা আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছিলেন বলে দলের জেলা নেতৃত্বের তরফে অভিযোগ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছিল। পাশাপাশি বিপ্লববাবুকে হারাতে সোনা পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। দল সূত্রের খবর, ভোট প্রচারের সময় সোনাবাবু হরিরামপুর কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন। তাঁকে দলের তরফে কুশমণ্ডি এবং কুমারগঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর অভিযোগ ধোপে টেকেনি। বরং কল্যাণবাবুর বিরুদ্ধে সরাসরি মন্ত্রী শঙ্করবাবুকে হারাতে মাঠে নামার অভিযোগ ওঠে। তার ৬ মাস আগে জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে বিপ্লববাবুকে সরিয়ে শঙ্করবাবুকে সভাপতি করার বিরুদ্ধে সরব হয়ে কল্যাণবাবু দলনেত্রীর সমালোচনা করেন বলে অভিযোগ রাজ্য স্তরে জমা পড়েছিল। তখন থেকেই প্রকাশ্যে শঙ্কর বিরোধীতায় কল্যাণকে দেখা যায় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

ভোটের মুখে জেলায় প্রচারে এসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুমারগঞ্জের সভায় কল্যাণবাবু, হিলি ব্লক তৃণমূল সভাপতি আশুতোষ সাহাকে না দেখে মঞ্চে দাঁড়িয়েই ওই গোষ্ঠীর আর এক নেত্রী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাকে ধমক দিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিতে বলেছিলেন। কাজ না হলে কড়া পদক্ষেপ নেবেন বলে হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন।

কিন্তু ভবি ভোলেনি। মুখ্যমন্ত্রী কপ্টার জেলার মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ে যেতেই পের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে। ভোটের আগে ও পড়ে গঙ্গারামপুরে বিপ্লবপন্থীরা প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছে বলে অভিযোগ তুলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জেলাশাসককে চিঠি দেন সত্যেনবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকার। ভোটের ফল বের হওয়ার পর তাঁর আশঙ্কাই সত্য হয়। হেরে যান সত্যেনবাবু। বালুরঘাটে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয় মন্ত্রী শঙ্করবাবু। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, কল্যাণবাবুকে ডিপিএসসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কড়া পদক্ষেপ শুরু হলো। এরপর বিপ্লব অনুগামী জেলাপরিষদ কর্তৃপক্ষের পালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shankar Chakrabarty Biplab Mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE