Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতারা সচেষ্ট বাগান দখলে, নালিশ

স্থায়ী কাজের আশ্বাস দিতে নারাজ মালিক বাগান ছেড়েছেন। ছোট চা বাগানের অন্তত ১৭ জন শ্রমিক ওই অভিযোগ তুলে কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করে রোজগার শুরু করেছেন। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জোড়াকালী চা বাগানের ওই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:০৫

স্থায়ী কাজের আশ্বাস দিতে নারাজ মালিক বাগান ছেড়েছেন। ছোট চা বাগানের অন্তত ১৭ জন শ্রমিক ওই অভিযোগ তুলে কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করে রোজগার শুরু করেছেন। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জোড়াকালী চা বাগানের ওই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাগান মালিকের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের কয়েকজন নেতার মদতে শ্রমিকরা আমাকে মারধরের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে বাগান দখলের চেষ্টা করছে।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব এবং বাগানের শ্রমিকরা অবশ্য বাগান দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির তরফে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানানো হয়েছে।

বাগানের মালিক শিলিগুড়ি সংলগ্ন কাওয়াখালি এলাকার বাসিন্দা যোগেশচন্দ্র অধিকারী। তিনি বলেন, “প্রায় এক বছর হল বাগানে যেতে পারছি না। তৃণমূলের দুই নেতা কৃষ্ণ দাস এবং প্রধান হেমব্রমের প্ররোচনায় বাগান দখলের চেষ্টা চলছে। শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছা মতো পাতা তুলে বিক্রি করছে। বাগানে গেলে আমাকে মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি।” যদিও জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী যোগেশবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর কথায়, “চা বাগান গায়ের জোরে কেউ দখল করতে পারে না। বাগান মালিক মিথ্যা অভিযোগ তুলে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছেন।”

বারোপাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কৃষ্ণ দাসও বাগান দখলের জন্য শ্রমিকদের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিজের বাগানের খোঁজ রাখতে পারি না। অন্যের বাগান দখল করতে যাব কেন! প্রধান হওয়ার সুবাদে শ্রমিকরা আমার কাছে এসেছিল। মালিককে বলেছি, স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে সমস্যা মিটিয়ে নিতে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটার প্রমাণ চেয়ে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছি।” একই বক্তব্য পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রধান হেমব্রমেরও। প্রধানের দাবি, ‘‘২০০০ সালে ১৩ একরের ওই বাগান তৈরির সময় স্থায়ী কাজের আশ্বাস দিয়ে আমার পরিবারের ৩ বিঘা জমি নেওয়া হয়। তখন অন্য মালিক ছিলেন। তিনি যে ১৭টি পরিবারের জমি বাগানের জন্য নেন তাঁদের মধ্যে ৯টি আদিবাসী পরিবারও আছে।’’ প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বর্তমান মালিক যোগেশবাবু বাগান কিনেছেন ২০০৬ সালে।

মিনা দাস, কার্তিক লোহার, মান্দ্রু মাঝি, সুরেশ দেবের মতো শ্রমিকরা জানান, মালিক বদলের পরে কিছু দিন সব ঠিকঠাক ছিল। সপ্তাহে ছয় দিন কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে টালবাহানা করে সপ্তাহে কাজ কমানো শুরু হয়। ওই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর কাজের সময় নিয়ে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে চুক্তি হয়। শ্রমিকরা জানান, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জন শ্রমিককে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেন মালিক। কিন্তু ওই বছরের মে মাসে বাগানের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেন মালিক। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ওই পরিস্থিতি চলে। ২০১২ সালের ১০ অগস্ট চুক্তি করে বাগান খোলা হয়। শ্রমিক গীতা দাস বলেন, “মালিক বকেয়া মিটিয়ে দিলেও কিছু দিন বাগান চালু রেখে চলে যান।” কমল দাস, শরৎ দাস, নারু মাঝির মতো শ্রমিকদের অভিযোগ, বাগানে কাজ করে সংসার চলবে এই আশাতে চাষের জমি বাগানে দিয়েছিলাম। এখন বলা হচ্ছে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি কাজ হবে না। স্থায়ী কাজের দাবি করা হলে বাগান দখলের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তাঁরা বলেন, “মালিক চলে যাওয়ার পরে প্রত্যেকে বিপাকে পড়েন। নিরুপায় হয়ে নিজেরা আলোচনা করে পাতা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ সালের ১৫ মে ওই সভার সিদ্ধান্তের কথা মহকুমাশাসক, বিডিও-কে জানান হয়। এখনও এ ভাবেই চলছে।”

যদিও শ্রমিকদের সাফাই মানতে রাজি নন বাগান মালিক যোগেশবাবু। তিনি বলেন, “আগের মালিক কী বলেছেন জানি না। ছোট বাগানে প্রত্যেকের স্থায়ী কাজের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানের অনেক চেষ্টা হয়েছে। অন্যায় ভাবে বাগান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে শাসক দলের নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছি। কেউ সাহায্য করেনি। উল্টে বাগান দখলের চেষ্টা চলছে।”

বাগান দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল চা শ্রমিক নেতা কল্যাণ হোড়। তিনি বলেন, “শ্রমিকরা দাবি জানাতেই পারে। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যোগেশবাবুকে কেউ বাগান ছাড়তে বলেনি।” প্রশাসনের কর্তারা ওই বাগানের সমস্যা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “ছোট বাগানের ওই ধরনের সমস্যার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

jalpaiguri trinamool tmc siliguri panchayet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy