Advertisement
E-Paper

থানাতে চড়াও হয়ে হুমকি, নালিশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

পর্যবেক্ষকের নির্দেশে তৃণমূল কাউন্সিলর সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে গত রবিবার সন্ধ্যায় থানায় মারধরের মামলা রুজু হয়। সে খবর পেয়ে গভীর রাতে থানায় চড়াও হয় তৃণমূল কর্মীরা, শাসিয়ে যায় পুলিশ কর্মীদের। এমনই অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়িতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৭

পর্যবেক্ষকের নির্দেশে তৃণমূল কাউন্সিলর সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে গত রবিবার সন্ধ্যায় থানায় মারধরের মামলা রুজু হয়। সে খবর পেয়ে গভীর রাতে থানায় চড়াও হয় তৃণমূল কর্মীরা, শাসিয়ে যায় পুলিশ কর্মীদের। এমনই অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়িতে। এই ঘটনায় অভিযোগের তির জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। সৈকতবাবুর বিরুদ্ধে এর আগেও এক পুলিশকর্মীকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও, সৈকতবাবু দাবি করেছেন, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি, পুলিশ কর্তাদেরও দাবি রবিবার রাতে থানায় কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার ভোটের দুপুরে। কংগ্রেস কর্মীদের মারধরের অভিযোগ তুলে শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দীনেশ রাউত সহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সূত্রের খবর, পুলিশ প্রথমে সেই মামলা নিতে না চাইলে, জেলা কংগ্রেসের তরফে পুলিশ পর্যবেক্ষককে নালিশ জানানো হয়। ভোট মেটার পরে সন্ধ্যেবেলায় পুলিশ পর্যবেক্ষকের নির্দেশে কোতোয়ালি থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়। এরপরেই রাত বারোটার পরে তৃণমূল কর্মীরা রাতে থানায় চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সে সময় আইসি সহ শীর্ষ পুলিশ অফিসারেদের অনেকেই থানায় ছিলেন না। তৃণমূল কর্মীরা থানার ভিতরে ঢুকে অনান্য অফিসার-কনস্টেবলদের ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। আইসির ঘরের দরজায় এক তৃণমূল কর্মী লাথিও মারে বলে অভিযোগ। থানার ঘরের কয়েকটি চেয়ার-টেবিলও উল্টে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রাত প্রায় একটা পর্যন্ত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা থানার ভিতরে ঢুকে চেঁচামেচি চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার সময়ে কোতোয়ালি থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ কর্মী তৃণমূলের কর্মীদের গ্রেফতার করতে পুলিশকর্তাদের থেকে ফোন করে অনুমতি চান। যদিও, পুলিশ কর্তারা ‘দেখছি, দেখব’ করে সময় কাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। বেশ কিছু পরে তৃণমূল কর্মীরা নিজেরাই ফিরে যান। থানায় ঢুকে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও, গ্রেফতার তো দূরের কথা জেনারেল ডায়েরিও করা হয়নি বলে সূত্রের খবর। এই ঘটনায় নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, ‘‘রাতে থানায় কেউ বিক্ষোভ দেখাতে আসেননি।’’ জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়ার মন্তব্য, ‘‘ভোটের দিন গোলমালের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ হয়েছে।’’

জলপাইগুড়ির রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের বুথে গত রবিবার দুপুরে কংগ্রেসের এজেন্টদের তৃণমূল কর্মীরা বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। টিভি ক্যামেরায় সে ফুটেজও তোলা হয়। ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রশাসনকে জমা দেয় কংগ্রেসকর্মীরা। এরপরেই জেলার পুলিশ পর্যবেক্ষক মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন। তবে শুধু থানায় ঢুকে নয়, রবিবার গোলমাল থামাতে রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে পুলিশ পৌঁছলে প্রকাশ্যে পুলিশ কর্মীদের শাসানো হয়েছে বলে অভিযোগ। সৈকতবাবু প্রকাশ্যে পুলিশ অফিসারদের বদলি করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ, এরপরেই পুলিশ পিছু হঠে যায়।

যদিও, পর্যবেক্ষকের নামে নালিশ যাওয়ায় পরে রাতে মামলা রুজু করতে বাধ্য হয় থানা। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলকর্মীরা থানায় গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সৈকতবাবু অবশ্য এ দিনও হুমকি জারি রেখেছেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সিপিএম আর কংগ্রেস ভোটের দিন আমাদের উপরে হামলা চালায়। পুলিশ এসে উল্টে আমাদের কর্মী সমর্থকদের হেনস্তা করে, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আমার বৃদ্ধা মাকেও পুলিশ ধাক্কা দিয়েছে। কয়েকজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আমরা নালিশ জানিয়েছি। আমাদের কাউন্সিলরকে যদি পুলিশ গ্রেফতার করে, তবে আমরা পাল্টা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘পুলিশকে ক্রমাগত চাপে রাখার চেষ্টা করছে তৃণমূল নেতারা। কেউ চড় মারছে, কেউ টেবিল উল্টে দিচ্ছে। আর পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতির দাবি, ‘‘তবু কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক থাকায়, আমাদের অভিযোগ নেওয়া হয়েছে।’’ জলপাইগুড়ির এক বাম নেতার কটাক্ষ, ‘‘এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী পুলিশকে নিরাপত্তা দিক।’’

tmc police threat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy