Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

মোটরবাইক, মদ্যপ শাসনে শিলিগুড়ির পথে স্বয়ং সিপি

ভরসন্ধ্যায় আচমকা হুড়োহুড়ি শিলিগুড়ির ব্যস্ততম মোড় হাসমি চকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছোটাছুটি বাঘাযতীন পার্কে। বিনা হেলমেটের বাইক আরোহী যুবক পালাতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছেন রাস্তায়।

শিলিগুড়ির পথে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। —নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ির পথে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। —নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

ভরসন্ধ্যায় আচমকা হুড়োহুড়ি শিলিগুড়ির ব্যস্ততম মোড় হাসমি চকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছোটাছুটি বাঘাযতীন পার্কে। বিনা হেলমেটের বাইক আরোহী যুবক পালাতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছেন রাস্তায়। কোথাও হেলমেটবিহীন তরুণী স্কুটি থামিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে ঘামছেন। বিস্তর অনুরোধ, নানা প্রভাবশালীর ফোন সত্ত্বেও কারও রেহাই মেলেনি জরিমানার হাত থেকে। কারণ, রাস্তায় যে খোদ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা এমন ভাবেই যান শাসন হল শিলিগুড়িতে। ১৩৬ জন মোটরবাইক, স্কুটি আরোহীর নথিপত্র নিল পুলিশ। জরিমানাও হল অনেকের। নেতৃত্বে খোদ পুলিশ কমিশনার। যা দেখেশুনে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঠান্ডা ঘরে বসে না থেকে পুলিশ কর্তারা নিয়মিত এমন অভিযানের নেতৃত্ব দিলে বেপরোয়া যান চালানোর প্রবণতা কমে যাবে।’’

সন্ধ্যায় অভিযান শুরু হাসমি চক থেকে। বিধান রোড, হিলকার্ট রোড, কাছারি রোডের দিকেও পুলিশে ছয়লাপ। গত বুধবার সন্ধ্যায় বাঘা যতীন পার্ক এলাকায় অভিযান হয়। এ দিন কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও উঠতি বয়সের ছেলেদের কান ধরে বকাঝকা করে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। তরুণী, স্কুল পডুয়া মেয়েদের স্কুটি নিয়ে বেপরোয়া ভাবে ঘোরাফেরা করা বা যে কোনও আড্ডায় বসতে না করা হয়েছে। তেমন দেখলে অভিভাবকদের ডেকে আনা হবে, এ কথাও বলে দেওয়া হয় তাদের। অনেকে সিপি-কে দেখে মোটরবাইক, স্কুটি ফেলে পিঠটান দেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা হলেই এলাকায় কিছু যুবক-যুবতী এসে আড্ডা বসায়। রাত বাড়তেই মদ, গাঁজা, নেশার সিরাপের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে এলাকা। অভিযোগ রয়েছে অশালীন কাজকর্মেরও।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘শহরে বেআইনি যান চালানো একদম বরদাস্ত করা হবে না। প্রকাশ্য জায়গায় যেখানে সেখানে নেশার আসর বসাতে দেখলে গ্রেফতার করা হবে।’’ এখন শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। বলেন, ‘‘এতে কাজ হলে ভাল। না হলে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা হবে।’’ অভিভাবকদের প্রতি তাঁর বার্তা, দয়া করে ছেলেমেয়েদের একটু শাসন করুন।

Advertisement

বস্তুত, সিপি আসরে নেমেছিলেন এ দিন সকাল থেকেই। সকালে শহরের বিশিষ্টজনেদের একাংশ পথ সুরক্ষার দাবিতে তাঁকে স্মারকলিপি দেন। বাসিন্দাদের নিজের দু’টি মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সিপি। কোন মোবাইল নম্বরে হোয়াটস অ্যাপ রয়েছে তা-ও জানিয়েছেন। ছবি তুলতে না পারলে, বাইক-গাড়ির নম্বর মোবাইল মেসেজে পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছেন বাসিন্দাদের। নাগরিকদের তরফে নাট্যকার পার্থ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার যাবতীয় অভিযোগ সরাসরি জানাতে বলেছেন। আমরাও শহরের রাস্তায় নজরদারি করব।’’

তবে চলন্ত বাইক-গাড়ির ছবি কতটা তোলা সম্ভব, সে প্রশ্নও উঠেছে। এর আগে মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে পুলিশের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ শুরু হয়। সেখানে মদ্যপ আরোহীদের রুখতে ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা, হেলমেট ব্যবহার করার উপরে জোর দেন সিপি। জানান, বিভিন্ন কলেজ, স্কুল, পার্ক, পাড়ার মোড়েও অভিযান চলবে।

মাসখানেক আগে শহরের এক প্রবীণ নাগরিককে ধাক্কা মারে বেপরোয়া বাইক। দুর্ঘটনায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে বেপরোয়া বাইক বা গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ছে। উচ্ছশৃঙ্খল আচরণ বাড়ছে শহরে। সন্ধ্যের পরে ব্যস্ত হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বর্ধমান রোড দিয়ে ট্র্যাফিক আইনের পরোয়া না করে তীব্র গতিতে বাইকের চলে যাওয়া রোজকার পরিচিত দৃশ্য। মহাবীরস্থানের উড়ালপুল দিয়ে ঝড়ের গতিতে বাইকের ওঠা-নামাও নিত্যদিনের ছবি। শহরের গলিপথগুলিতেও চলে বেপরোয়া বাইক চালানো। সে সবই এখন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন সিপি।

সহ-প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.