মাইক, বক্স বাজিয়ে চলছে নাচ-গান। ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের নামে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন মাইক বাজিয়ে নাচগান করে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার বিকেলে কোচবিহার শহর লাগোয়া টাকাগছ স্পেশাল ক্যাডার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ওই শিলান্যাস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অভিযোগ, অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে অন্তত ৮ টি সাউন্ড বক্স ও এলাকার বিভিন্ন গাছে ৮ টি মাইক লাগান হয়। দুপুর থেকে রীতিমতো তারস্বরে ওই সব সাউন্ড বক্স ও মাইক বাজানো শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকে রামভোলা হাইস্কুল ও কোচবিহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র দুটির দূরত্ব বড়জোর পাঁচশো মিটার থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে। ওই ঘটনায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিধি ভেঙে মাইক বাজিয়ে নাচগান করে সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের এমন আয়োজন দেখে অস্বস্তিতে পড়েন পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব ও প্রশাসনের কর্তারা। বিকেল ৪টে নাগাদ পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ঘটনাস্থলে পৌঁছেই উদ্যোক্তাদের ধমকে তড়িঘড়ি মাইক ও সাউন্ড বক্স বন্ধ করেন। মাইক্রোফোন সরিয়ে খালি গলায় বক্তব্য রাখেন পূর্ত পরিষদীয় সচিব ও কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, এদিন সুঙসুঙি বাজার ও টাকাগছ এলাকার সংযোগকারী মরা তোর্সার ওপর নতুন সেতু তৈরির শিলান্যাস অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তৃণমূল পরিচালিত টাকাগছ-রাজারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত। টাকাগছ স্পেশাল ক্যাডার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই এলাকায় ছিল উসবের আবহ। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা দুপুর ২টা নাগাদ অনুষ্ঠান চত্বরে চলে আসেন। তখন থেকেই ভাওয়াইয়া গান, বৈরাতি নৃত্যের পাশাপাশি একদল উত্সাহী তৃণমূল সমর্থকের উদ্দাম নাচের সঙ্গে শুরু হয় শব্দ তান্ডব। ফলে এলাকার প্রাথমিক স্কুলের পঠন-পাঠন বিঘ্নিত হয়। তাতেও আমল না দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শুরুর দিন শব্দ তান্ডব জারি থাকে। বিকেল অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রবীন্দ্র নাথ বাবু। পরে অবশ্য তিনি বলেন, “ভুল করে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা সাউন্ড বক্স এনেছিলেন। অনুষ্ঠানে তা বাজাননি। খালি গলায় বক্তব্য রেখেছি।”
কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “আমি গিয়েই ওই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিই। কোনও শব্দ যন্ত্র বাজানো যাবে না বলে তা বন্ধ করতে বলি।” পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়ে যাওয়া টাকাগছ-রাজারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মালঞ্চ দাস বলেন, “আমরা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকলেও সাউন্ড বক্স বা মাইক গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আনা হয়নি। এলাকার কিছু উত্সাহী মানুষ ওই ব্যবস্থা করেছিল। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়েই সব বন্ধ করে দিই।”
বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা তো বটেই লাগোয়া দুটি স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীদের শব্দ তান্ডবে সমস্যায় পড়েন। সরকারি ওই অনুষ্ঠানকে তৃণমূল দলীয় মঞ্চে পরিণত করেছিল। দুপুর থেকে অন্তত ঘন্টা দুয়েক তারস্বরে মাইক ও সাউন্ডবক্স বাজান হয়। লোক দেখাতে পরে ওই শব্দ তান্ডব বন্ধ করা হয়েছে।”
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সম্পাদক মহানন্দ সাহা বলেন, “শাসকদল নিয়মের তোয়াক্কা করছে না দেখে সাধারণ মানুষও উত্সাহ পাচ্ছেন। গোটা রাজ্যে এটাই তৃণমূল জমানার সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোহার ওই সেতু তৈরিতে ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কোচবিহার জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রাও নেওয়া হয়েছে। পুরানো সেতুটির বেহাল দশা হওয়ায় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই নতুন সেতুর দাবিতে এলাকায় আন্দোলন করছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy